মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে টিভি, ফ্রিজ, মশার কয়েল, ভাল্ব, বিক্রির নামে আত্মকর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টির অভিনব প্রতিশ্রুতি দিয়ে শতাধিক নারী-পুরুষ গ্রাহকের কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে মোনাভী অল বাংলাদেশ নামে একটি মাল্টি লেভেল ভুয়া হায় হায় কোম্পানি। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বিকালে উপজেলার সুবিদখালী কলেজ রোড এলাকার তিন রাস্তার মোড় নামক স্থানে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে ওইদিন বিকেলে অস্থায়ী অফিস কার্যালয়ের সামনে গ্রাহকরা জড়ো হতে থাকে। কেউ কেউ বিলাপ করে বলেন আমার টাকা, আমার টাকা। এ ঘটনায় শতাধিক উপকারভোগী পরিবারের অন্ধকার নেমে এসেছে। 

সোমবার রাতে ওই কোম্পানির গ্রাহক রানা গাজী (সঙ্গীত) বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ১০/১২জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মির্জাগঞ্জ থানায় একটি প্রতারনা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ কোম্পানির দুই জন প্রতারককে গ্রেফতার করে পটুয়াখালী জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর মোনাভী অল বাংলাদেশ(প্রাঃ) লিঃ নামের এই কোম্পানিটি মির্জাগঞ্জে পণ্য বিক্রি ও অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহের লক্ষ্যে ৮০জন প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. জামাল হোসেন মুকুল। প্রতারক চক্রটি হতদরিদ্র পরিবারের যুবক-যুবতী মেয়েদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এলাকায় নারীদের টার্গেট করে। জামানত বাবদ ৭০হাজার টাকা করে নিয়ে মাস ব্যাপী প্রশিক্ষন দেয়া হয় নিয়োগকৃত প্রতিনিধিদের।

প্রতারণার শিকার রানা গাজী(সঙ্গীত),আসমা আক্তার, শাহআলম, সাইদুর রহমান বলেন, প্রতিজন প্রতিনিধি ২০হাজার টাকা দামের একটি এলইডি টিভি বিক্রি করতে পারলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাকে ১ হাজার ৭’শ টাকা ফেরত দেয় নিজস্ব একাউন্টের মাধ্যমে। হাতে গোনা দুই-একজন প্রতিনিধি টিভি বিক্রির কমিশনের টাকা ফেরত পেলেও অধিকাংশ প্রতিনিধিকে টাকা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। পণ্য বিক্রির কার্যক্রম ছাড়াও অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গোপনে ক্রেডিট কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল এ ভুয়া কোম্পানিটি।

এক লক্ষ টাকা জমা দিয়ে প্রতি মাসে ১ হাজার ৭০০ টাকা হারে, দুই বছরে ১ লক্ষ ৭০হাজার ফেরত দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেন। অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা অধিক মুনাফার লোভে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋন নিয়ে এখানে ২ লক্ষ, ৩ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন বলেও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান।

এভাবে ৮০-৮৫জন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেছে এ প্রতারক চক্রটি। পণ্য বিক্রির জন্য নিয়োগকৃত প্রতিনিধি ও গ্রাহকের নিকট থেকে ২ কোটি ৫০লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে ভুয়া এই কোম্পানির কর্মকর্তারা বলে জানা যায়। সোমবার বিকেলে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে এই কোম্পানির শাখা অফিস লাপাত্তা হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রাহকরা অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের নিকট এ বিষয়ের সত্যতা জানতে চাইলে তারা কোন সদুত্তর না দিতে পারায় এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় গ্রাহকরা ফুঁসে উঠেন।

গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে গ্রাহকরা টাকা ফেরতের দাবীতে অফিসের দুই কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং অফিস সংলগ্ন বরিশাল-বাকেরগঞ্জ-বরগুনা মহাসড়ক অবরোধ করলে মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে কোম্পানীর দুই কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. আবদুল মালেক হাওলাদারকে আটক করে পুলিশ।

এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)এম.আর শওকত আনোয়ার ইসলাম জানান, ওই কোম্পানির গ্রাহক রানা গাজী (সঙ্গীত) বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১০/১২জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে সোমবার রাতে মির্জাগঞ্জ থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন। দুই জনকে গ্রেফতার করে পটুয়াখালী জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।

(ইউজি/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২০)