স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬ দিনে ২১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। বেশি দাম রাখা, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, পণ্যের গায়ে মূল্যতালিকা, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকায় এসব অভিযোগ করেন তারা।

মেলা প্রাঙ্গণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের অস্থায়ী কার্যালয়ের এ অভিযোগ করা হয়। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মেলায় অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মেলায় ক্রেতার স্বার্থে সার্বক্ষণিক তদারকি ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। মেলা শুরুর পর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতনতার পাশাপাশি সক্রিয় কার্যক্রম চালাচ্ছে অধিদফতর। প্রতিদিন অভিযান চলছে। যারা ভোক্তা আইন অমান্য করে অনৈতিকভাবে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও কোনো পণ্য কিনে প্রতারিত হলে ভোক্তা সরাসরি মেলায় লিখিত অভিযোগ করতে পারছে। অভিযোগ আসার পর তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। প্রমাণ সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা।

মেলায় দায়িত্বে থাকা অধিদফতরের পরীক্ষক মো. রিয়াদুল ইসলাম জানান, ১ জানুযারি মেলা শুরু পর থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৩০ প্রতিষ্ঠানকে ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত অভিযানে ২৬টিকে ৭৮ হাজার টাকা এবং লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৪টিকে জরিমানা করা হয়।

মেলা শুরু থেকে এ পর্যন্ত (২৬ জানুয়ারি) ২১টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর ওপর ভিত্তি করে তদন্ত ও শুনানি করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৪টি প্রতিষ্ঠানকে জারিমানা করা হয়; বাকি ১৭টি অভিযোগ আপস ও সমঝোতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

তিনি জানান, এস এস ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে মো. রকিবুল হাসান নামের এক ভোক্তা অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ ছিল ‘পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পরিবর্তন করে নতুন মেয়াদ দেয়া হয়েছে।’ এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জরিমানার ২৫ শতাংশ ২,৫০০ টাকা অভিযোগকারীকে দেয়া হয়েছে। খাবারের দাম বেশি নেয়ায় মেলায় হাজি বিরিয়ানিকে দুই হাজার টাকা, পণ্যের গায়ে মূল্যতালিকা, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকায় আরও দুটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

বরাবরের মতো এবারও বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি শুরু হয় ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মাসব্যাপী এ বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকছে মেলা। টিকিটের দাম এ বছর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এবারের মেলায় মোট স্টল/প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৪৮৩টি। এর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ১১২টি, মিনি প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ১২৮টি এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টলের সংখ্যা ২৪৩টি। এর মধ্যে বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৭টি, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি এবং বিদেশি প্রিমিয়ার স্টলের সংখ্যা ১৭টি।

এবারের মেলায় বাংলাদেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি ও তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।

মেলায় ক্রেতারা যেসব পণ্য কিনতে পারছেন তার মধ্যে অন্যতম দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত পণ্য সামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়া জাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক সামগ্রী, মেলামাইন সামগ্রী, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ঘড়ি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইমিটেশন জুয়েলারি, সিরামিকস, টেবলওয়্যার, ক্যাবল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, আসবাবপত্র ও হস্তশিল্পজাত পণ্য, উপহার সামগ্রী, কনস্ট্রাকশন সামগ্রী, হোম ডেকর, বেকারি পণ্য, বিদেশি বস্ত্র ইত্যাদি।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২৭, ২০২০)