মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বীরাংগল গ্রামের ৮ নং ওয়ার্ডের নুরুজ্জামান চৌকিদার তার স্ত্রী আসমা বেগমকে নিয়ে কাপড় দিয়ে ঘর বানিয়ে সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নদীতে ঘর হারিয়ে আজ তারা বসবাস করছেন একই উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের কামাল মাতুব্বরের জায়গায়। নিজের জমি নেই বলে এখানেই কাপড়ের ঘর বানিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।’ সেই দম্পতিকে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস সোমবার দুপুরে ৩ বান্ডিল টিন, নগদ ৯ হাজার টাকা, কম্বল, জামা-কাপড় ও প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়েছেন। 

এছাড়াও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক অহিদুজ্জান খান বাবর ৫ হাজার টাকা সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীর হাতে দিয়েছেন ঐ দম্পতিকে দেয়ার জন্য।

এতে করে ঐ দম্পতির মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তাদের নতুন ঘর হবে এই আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে আসমা বেগম বলেন, নদীতে ঘর ভেঙ্গে গেছে। ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে খাবারই হয় না। আর ঘর তোলার কথা তো ভাবতেই পারিনি। তাছাড়া আমার স্বামীর মানসিক সমস্যা থাকায় কোন কাজই করতে পারেনা। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি পড়েছিলো, তখনও আমরা এই শীতের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে এখানেই থেকেছি। এখন ঘর হবে আমাদের, এর চেয়ে আনন্দ আর কি হতে পারে। আজ (সোমবার) এগুলো পেয়ে আমরা খুব খুশি। এখন আমরা টিনের ঘরে থাকতে পারবো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের স্থানীয় সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীর তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট আয়শা আকাশী পেইজে শুক্রবার বিকেলে ‘কাপড়ের ঘরে মানবতার জীবন যাপন করছেন অসহায় দম্পতি...’ শিরোনামে ছবিসহ একটি পোষ্ট দেন। সেই পোষ্ট দেখে শনিবার দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস ও মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা, মেম্বর আইয়ুব আলী ফকির সরেজমিনে দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যান। এসময় সাথে সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীও ছিলেন। তারা সেখানে গিয়ে সত্যতা পেলে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস ঘর তুলে দেয়ার আশ্বাস দেন।

পরে সোমবার দুপুরে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সেই দম্পতি নুরুজ্জামান চৌকিদার ও তার স্ত্রী আসমা বেগমের হাতে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস ৩ বান্ডিল টিন, নগদ ৯ হাজার টাকা, যাতায়াতের জন্য আরো ১ হাজার টাকা, ৪টি কম্বল, জামা-কাপড় ও মানসিক প্রতিবন্ধী নুরুজ্জামান চৌকিদারকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়েছেন।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, আয়শা আকাশীর ফেসবুকে অসহায় দম্পতির স্ট্যাস্টাসটি দেখে খুব খারাব লেগেছে। তাই এখানে ছুটে গিয়েছিলাম। তাদের মানবেতর জীবন যাপন দেখে দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদের ঘর নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। টাকা ও টিন দেয়া হয়েছে। ঐ এলাকার মেম্বর আইয়ুব আলী ফকিরের তত্বাবধানে ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হবে।

সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী বলেন, মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস ঘর তুলে দেয়া জন্য আজ (সোমবার) টিন ও টাকা ঐ দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছেন। এছাড়াও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক অহিদুজ্জান খান বাবর ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। আরো কয়েকজন টাকা দিতে চেয়েছেন। সব টাকাগুলো একত্র করে ঐ দম্পতির হাতে তুলে দেয়া হবে।

(এএস/এসপি/জানুয়ারি ২৭, ২০২০)