রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে রেকর্ডীয় কবরস্থানের মাটি ও শাল গাছ কেটে উজাড় করে নেওয়া হলেও। নজর নেই প্রশাসনের। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা বনবিভাগ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের ভেলাই নামক গ্রামে ভেলাই মৌজার জেএল নং-৪১ এর ৪ খতিয়ানের ২৯১ নং দাগের প্রায় দুই একর রেকর্ডীয় এম জেড এফ বিক্স ইটভাটা ঘেঁষা শত বছরের আগের কবরস্থানের জমি জুড়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ শাল গাছ। শাল গাছের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে স্থানীয় অনেক মানুষের কবর। সে কবরস্থানের প্রায় এক বিঘা জমি জুড়ে প্রায় পাঁচ ফিট গর্ত সমান মাটি কেটে খাল করে রাখা হয়েছে। এ মাটি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি কেটে কবরস্থান ঘেঁষা এম জেড এফ বিক্স ইট ভাটায় বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানা যায়।

অন্যদিকে বিশাল এ শাল বাগানের প্রায় ত্রিশটি গাছের কেটে নেওয়া গোড়া(মুড়া) পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা যায়। স্থানীয়রা জানায় পরিত্যক্ত গোড়ার(মুড়া) শাল গাছগুলো কেটে ইট ভাটায় নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ শাল গাছ কেটে এভাবে উজাড় করলেও কোন ব্যবস্থায় নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন বলে অভিযোগ ভেলাই গ্রামবাসীর।

এদিকে শত বছরের কবরস্থানের মাটি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ শাল গাছ অবৈধভাবে কাটার প্রতিবাদ জানান ঐ গ্রামের মৃত দলিলুর রহমানের ছেলে মজিবর রহমান। তবে এ প্রতিবাদ করার কারণে মজিবরকে পড়তে হয় প্রভাবশালীদের রসানলে। প্রভাবশালীরা মজিবরকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হুমকিসহ হত্যার হুমকি দেয়। তাই বাধ্য হয়ে মজিবর এর সুষ্ঠ বিচার চেয়ে এবং কবরস্থানের মাটি ও শাল গাছ রক্ষায় গ্রামবাসীর পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারী পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি কবরস্থানের মাটি ও শাল গাছ কেটে বিক্রি কারী হিসাবে ভেলাই গ্রামের প্রভাবশালী মৃত এবাদুল হকের ছেলে আনিসুর রহমান, আব্দুল সামাদের ছেলে সইদুল হক,সহিম উদ্দীনের দুই ছেলে ইউসুফ আলী ও ইয়াকুব আলী, দেলোবর হোসেনের ছেলে মকলেসুর রহমানের নাম দেন।

গ্রামবাসীর পক্ষে ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার স্বার্থে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মজিবর রহমান বলে সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেন। তিনি আরো জানান,অভিযোগ দেওয়ার প্রায় সপ্তাহ খানেক পার হয়ে গেছে উপজেলা প্রশাসন কোন ব্যবস্থায় নিচ্ছে না। এতে প্রভাবশালীরা আরো বেশি অত্যাচার বাড়িয়ে দিয়েছে আমার পরিবারের উপর। তাই মজিবর রাষ্ট্রীয় এ সম্পদ রক্ষার স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তবে এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে ইট ভাটা ব্যবসায়ী মকবুলের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি তাতে সাড়া দেন নি।

অভিযুক্তের একজন আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি এটা। তবে কবরস্থানের মাটি ভাটা ব্যবসায়ী কেটে নিয়েছেন। আর শাল গাছ কাটার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা শাহাজাহান আলী বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। গাছ আটকিয়ে কবর দিলে তা আমি উদ্বার করতে পারি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদা বলেন, বিষয়টি আমি খোজ নিয়ে দেখি।

(কেএ/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০২০)