রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় আমাদা গ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া গুলি ও অস্ত্র নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। গুলি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদা সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষজনদের মাঝে নানা ধরনের আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। গ্রাম্য দ্বন্দের জের ধরে স্রেফে হয়রানির উদ্দেশ্যে এ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে এলাকার অধিকাংশ মানুষজনদের অভিমত। 

এসব মানুষজন আরও জানিয়েছেন, শান্ত আমাদা গ্রামকে অশান্ত করার জন্য একদল কোন্দল প্রিয় মাতুব্বরা নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের সার্বক্ষনিক নজরদারির কারণে ওই কোন্দল প্রিয় মাতুব্বরদের অপতৎপরতা এবং ষড়যন্ত্র আলোর মুখ দেখছে না। এহেন পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে চিহ্নিত ওই কোন্দল প্রিয় মাতুব্বররা গুলি ও অস্ত্র উদ্ধারের মতো নাটক সাজিয়ে পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে। সব কিছু মিলে, গুলি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার শান্তিপ্রিয় সাধারন মানুষজনদের মধ্যে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

লোহাগড়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার(২৫জানুয়ারি) দুপুরে লোহাগড়া থানার এসআই মিল্টন কুমার দেবদাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আমাদা গ্রামের তিতু মন্ডলের বাড়িতে অভিযান চালায়।

এ সময় তিতু মন্ডলের বসত বাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে বাগানের ছাঁই গাদা থেকে একটি জিন্সের কাপড়ের ব্যাগে রক্ষিত এক রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ও দেশীয় একটি বেটাগান পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় তিতু মন্ডল বাড়িতে ছিলেন না। এ ঘটনায় লোহাগড়া থানায় একটি সাধারন ডায়েরী (জিডি) দায়ের করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার এসআই ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মিল্টন কুমার দেবদাস বলেন, গুলি ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, লোহাগড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের আমাদা গ্রামটি দাঙ্গাপ্রবণ এবং গ্রাম্য কোন্দলে জর্জরিত। আধিপত্য বিস্তার করা এই গ্রামে বিবাদমান দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন কাসেম খাঁন অপর পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন আলী আহম্মদ খাঁন। বিবাদমান দুটি পক্ষেই রয়েছেন কোন্দলপ্রিয় মাতুব্বর। এই কোন্দল প্রিয় মাতুব্বররা গ্রামে কোন্দল জিইয়ে রেখেছেন। তুচ্ছ বা সামান্য ঘটনাকে পুঁজি করে সৃষ্ট কোন্দল দ্বন্ধ-সংঘাতে রুপ নেয়। ঘটে হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর, হাত-পায়ের রগ কর্তন, মামলা-মোকদ্দমা সহ নানা অপরাধ। দু’পক্ষের লোকজনই দেশীয় অস্ত্র ঢাল, সড়কি, বল্লম, রামদা, ছ্যানদা ব্যবহার করে থাকে। তবে, এ সব সংঘর্ষে কখনোই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয় না বলে অনুসন্ধানকালে জানা গেছে। অথচ, ওই গ্রামেরই একজন কৃষকের বাড়ির পাশ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় গুলি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা রীতিমতো রহস্যজনক।

এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের লুৎফর মন্ডলের ছেলে তিতু মন্ডল মুলতঃ একজন কৃষক। কৃষিকাজ ও গরুপালন করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এ ছাড়া তিনি বি-ভাইরাস রোগে আক্রান্ত। গ্রামের কাসেম খাঁন সমর্থিত গ্রুপের সমর্থক তিনি। এ কারণে প্রতিপক্ষ তার ওপর ক্ষুদ্ধ। তাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষ তার বাড়ির পাশের বাগানে গুলি ও অস্ত্র রেখে মামলা-মোকদ্দমায় জড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে তিতু মন্ডলের স্ত্রী আখি বেগম গত রোববার(২৬ জানুয়ারি) তার স্বামীকে অযথা হয়রানি হতে অব্যহতির জন্য নড়াইল পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন। আলাপকালে আখি বেগম অভিযোগ করে বলেন, একটি মেয়ে ঘটিত ঘটনায় আমার স্বামী জড়িত না থাকলেও গ্রামে দল করার কারণে পুলিশ তাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছে। প্রতিপক্ষের ইন্ধনে পুলিশ এহেন কাজ করেছে তিনি অভিযোগ করেন। একই ভাবে গ্রামের ওই চিহ্নিত প্রতিপক্ষ আমার বাড়ির পাশে গুলি ও অস্ত্র রেখে আমার স্বামীকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করেছে।

এ বিষয়ে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম(বার) বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে জন্য কাজ করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য নড়াইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, মঙ্গলবার(২৮ জানুয়ারি) দুপুরে নড়াইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল আমাদা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন এবং এ বিষয়ে খোঁজ-খবর অব্যহত রেখেছেন।

(আরএম/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০২০)