উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : জামালপুরের সাংবাদিক শেলু আকন্দের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার ন্যায় বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে মুক্ত প্রকাশ। এছাড়াও জামালপুরে বসবাসরত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জামালপুরের ৪৮ জন সাংবাদিক নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সদর থানায় জেনারেল ডাইরি করেছেন। ইতিপূর্বে এত অধিক সংখ্যক জার্নালিস্ট কখনো একসঙ্গে নিরাপত্তার জন্য জেনারেল ডায়েরি করেননি। এটা উদ্বেগের বিষয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দাবি জানান সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিগত ৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তপ্রকাশ (for Freedom of Expression, Bangladesh -FExB) এর একটি প্রতিনিধিদল জামালপুরের সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং নির্যাতনের চিত্র পরিদর্শনের লক্ষ্যে জামালপুর সফর করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মুক্ত প্রকাশের প্রধান উপদেষ্টা এবং লন্ডন ভিত্তিক আর্টিকেল ১৯ এর রিজিওনাল ডিরেক্টর ফারুখ ফয়সল, মুক্ত প্রকাশ চেয়ারপারসন অধ্যাপিকা ডক্টর সৈয়দা আইরিন জামান, জেনারেল সেক্রেটারি সালিম সামাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আহমাদ উল্লাহ এবং ইফাত নওরিন মল্লিক। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহ-সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল।

শেলু আকন্দ বাংলা বাজার পত্রিকার জামালপুর প্রতিনিধি এবং দৈনিক পল্লী কণ্ঠ প্রতিদিন-এর রিপোর্টার।

শেলু আকন্দের বড়ভাই দেলোয়ার হোসেন আকন্দ জামালপুর সদর থানায় হামলার জন্য দায়ি করে জামালপুর পৌর কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান, তাঁর ছেলে রকিব খান এবং আরো চার জন সন্দেহভাজন আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৭৬৮, তারিখ: ১৯/১২/২০১৯।

নেতৃবৃন্দ এ সব বিষয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক, এ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার মুহাম্মদ বাছির উদ্দিন, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

জামালপুর সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে জামালপুর প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করেন। জামালপুরের অধিকাংশ সাংবাদিক এই আলোচনায় অংশ নেন। নেতৃত্বে ছিলেন জামালপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা এবং জেনারেল সেক্রেটারি লুৎফর রহমান এবং অন্যান্য নির্বাহীবৃন্দ।

এদিকেজামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইনামুল হক জানিয়েছেন, শেলু আকন্দের মামলার বিষয়টি জানুয়ারি মাসের Law and Order meeting-এ আলোচিত হয়েছে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখের মিটিং-এ এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করেন।

জেলা প্রশাসন কাউন্সিলর রুনু খান যে জমি দখল করেছিলেন তা পুনরুদ্ধার করেছে, সেখানে কাউন্সিলর কাঁচা বাজার বসিয়েছিলেন। তাঁর butcher license-বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক শেলু আনন্দের চিকিৎসায় সহায়তা প্রদান করবেন বলে জানিয়েছেন এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, শেলু আকন্দ সুস্থ হয়ে আবার সাংবাদিকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করবেন।

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আবুল বাছিত বলেন, তারা খুব দ্রুত চার্জশীট সাবমিট করবেন জামালপুর সদর হাসপাতাল থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট পাবার পর। তিনি নিশ্চিত করেন যে, পঙ্গু হসপিটালের রিপোর্টের ভিত্তিতে অতিরিক্ত চার্জশীট ফাইল হবে।

তিনি অবহিত করেন যে, ছয়জন অভিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে চারজন বিচারিক হেফাজতে আছেন, একজন পলাতক এবং প্রধান সন্দেহভাজন কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খান আকা রুনু খান হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন এবং নিম্ন আদালতে জামিনের জন্য তার হাজিরার তারিখ রয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ জামালপুরের সিনিয়র সাংবাদিক শেলু আকন্দ গুন্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তাঁর দুপা বহু খন্ডে ভাঙার ফলে তিনি বর্তমানে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরস্থ পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি প্রথম জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন কিন্তু পরবর্তীতে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন।

(পিআর/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০)