রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : অদম্য মেধাবী মিনারা। বয়স(১৬)। সে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। এবারে চলতি দাখিল পরীক্ষার হলে বসেছে, মনের বলে কব্জির জোরে কলম চলে তার। কোন দিকে না তাকিয়েই সমান তালে অবিরাম লেখেই চলছে। তার একটিই মিশন ভালো ফলাফল আর মানুষের মতো মানুষ হওয়া এবং প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানো । 

শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হলেও চিলমারীর মিনারা খাতুনকে কোন বাঁধাই আটকিয়ে রাখতে পারেনি । জন্মের কিছুদিন পর মাকে হারায় সে। এরপর বাবা বিয়ে করেন সংসারে আসে নতুন মা। বাবা দিনমজুর দিন আনে দিন খায় অভাবের সংসার। এর উপর শেষ আশ্রয় স্থান নদীর বাঁধে, তাও সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ভেঙ্গে দিয়েছে ।

বাধার উপর বাধা এরপরও নেই তার দু’হাতের আঙ্গুল তবুও প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে এবারের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। মিনারা চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল দক্ষিণ বাঁধ এলাকার রফিকুল ইসলাম ও মৃত মর্জিনা বেগমের মেয়ে। মিনারা কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা। দুই বোনের মধ্যে মিনারা ছোট।

জানা গেছে, জন্ম থেকেই তার ২ হাতের কব্জি বাঁকা, নেই আঙ্গুল তবুও থেমে যায়নি মিনারা। এবারে দাখিল পরীক্ষা অংশ নিয়ে দু’হাতের কব্জিতে কলম চেপে ধরে সমান তালে লিখছে প্রশ্নের উত্তর। দরিদ্র পরিবারের প্রতিবন্ধী মিনারা দুই হাতের কব্জির সাহায্যে উপর ভর করে একে একে ৫ম শ্রেণির সমাপনী (পিএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় পাস করে গ্রামের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে । সে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।

উপজেলার কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার ছাত্রী মিনারা । সকল বাধাকে উপেক্ষা করে কব্জির সাহায্যে কলম চালিয়ে তার লক্ষ্য অর্জনের পথে সে এগিয়ে চলছে । এভাবে কব্জির সাহায্যে সে সাংসারিক বিভিন্ন কাজে বাবা ও সৎ মাকে সহায়তা করেছে। ছোট বেলা থেকেই তার পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা মা তাকে স্থানীয় কেডি ওয়ারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। মিনারা পড়তে পারলেও লিখতে পারেনি। তারপরও সে কখনো মনোবল হারায়নি ।

অদম্য সাহসের সঙ্গে বড় বোনের সহায়তায় বাড়িতে বসে বসে দুই হাতের কব্জির সাহায্যে কলম জড়িয়ে ধরে লিখতে শেখে মিনারা। স্কুলের শিক্ষকগণ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতই যতœ সহকারে তাকে লেখাপড়া শেখাতে থাকেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর ও মাদরাসা থেকে সে উপবৃত্তি পায় তা দিয়ে কষ্ট হলেও চলে তার লেখাপড়ার খরচ। এর উপর শেষ আশ্রয়স্থল পাউবো'র বাঁধের রাস্তার বসতবাড়ির জায়গা টুকুও ছেড়ে দিতে হয়েছে। নিজেদের থাকার বাসস্থান না থাকায় বড় বোনের বাাড়িতে আশ্রয় নিয়ে চলতি দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মিনারা।

কাঁচকোল খামার সখিনা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা আইয়ুব আলী আকন্দ জানান, মিনারা ছাত্রী হিসেবে ভালো। মাদরাসায় লেখা-পড়ার সকল প্রকার দায়িত্ব আমরা নিয়েছিলাম। রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ মোঃ মিনহাজুল ইসলাম বলেন, দুই হাতের কব্জির সাহায্যে লিখে মিনারা ভাল পরীক্ষা দিচ্ছে। মেয়েটি ফলাফল ভাল করবে বলে আমরা আশাবাদি।

মিনারা খাতুন জানায়, সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন বড় হতে পারি এবং মানুষের সেবা করতে পারি পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের পাশে দাড়াতে চাই।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডাব্লিউ এম রায়হান শাহ্ বলেন, আমি দেখেছি এছাড়াও আমার মনে হয়েছে তার মাঝে অনেক গুন রয়েছে। সে ভালো কিছু করতে পারবে। তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করবো তাকে সহযোগিতার মাধ্যমে তার পাশে থাকার।

(পিএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০)