আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : টেলিভিশনে দেখি একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হয়। আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় আমরা ফুল দিতে পারিনা। কখনও শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারিনি এটাই আমাদের বড় কষ্ট।

ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বলেছে-রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের নিজ উপজেলা গৌরনদী পৌর এলাকার শতবর্ষী গেরাকুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ হাপানিয়া-শরিফাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঘার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জঙ্গলপট্টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাসেমাবাদ এবং হরিসেনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শহীদ মিনার।

একইভাবে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নিজ নামের ইউনিয়নের (জাহাঙ্গীর নগর) বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ডিগ্রী কলেজেও নেই কোন শহীদ মিনার। শুরু থেকে অদ্যবধি ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে স্থায়ীভাবে কোন শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। ফলে একুশের চেতনাবঞ্চিত হয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা হারাতে বসেছে নতুন প্রজন্ম। এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন সচেতন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একইভাবে বরিশাল সদর উপজেলার ৩০নং চরআইচা-২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২৮নং চরআইচা-৩ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শায়েস্তাবাদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শের-ই বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও নেই কোন শহীদ মিনার। নতুন প্রজন্মের দাবি ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন রক্ষনা বেক্ষনের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়।

সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের শহীদদের কথা স্মরণ করে এ মাস বাঙালীর বাংলা ভাষার গৌরবের মাস। ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য জীবন দেয়া রফিক, সালাম, বরকতের স্মরণে শহীদ বেদীতে করা হয় পুস্পমাল্য অর্পন। কিন্তু বরিশালে সরকারীসহ অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেই কোন শহীদ মিনার। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পরছে ভাষার জন্য জীবন দেয়া শহীদদের সম্মান জানাতে। তিনি ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মানের দাবি করেন।

শহীদ মিনার না থাকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শিক্ষা বিভাগ শহীদ মিনার নির্মাণের আদেশ দিলেও সরকারীভাবে বাজেট না থাকায় আদেশ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছেনা। এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, একুশে ফেব্রুয়ারীতে তারা তারা কখনও স্কুলের শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারেনি। ক্ষোভের সাথে শিক্ষার্থীরা বলে, টিভিতে দেখি একুশে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হয়। আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় আমরা ফুল দিতে পারিনা।

সচেতন অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে স্কুলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার নির্মান না করায় বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারীতে ভাষার দাবীতে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একইভাবে শিক্ষার্থীরা ’৫২-র ভাষা আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর গুরুত্ব সম্পর্কেও সঠিক ধারণা নিতে পারছে না।

সূত্রমতে, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আগরপুর ডিগ্রী কলেজ প্রাঙ্গণে কলেজ কর্তৃপক্ষ সৌন্দর্য বৃদ্ধির নামে কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে ফুলের বাগান তৈরি করলেও আজও স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। প্রতিবছর ওই কলেজে অস্থায়ীভাবে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মান করা হলেও শহীদ দিবসের প্রথম প্রহরের পর পরই তা ভেঙ্গে ফেলা হয়। এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, সরকারী কিংবা বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই আমি আশা করছি সেইসব প্রতিষ্ঠানে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারীর আগেই যেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন আমি সেই আশাই করছি।

জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই, সেইসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত মুজিব কর্নারের মতোই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলা হবে শহীদ মিনার। বাংলা ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০)