রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : উদ্ধার হওয়া নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীকে আবারো অপহরণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। বুধবার রাত আটটার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার পাইথালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওই মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন পরিবারের সদস্যরা। ফলে তার স্কুলে ও বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের পাইথালী গ্রামের কৃষক দুলাল চন্দ্র দেবনাথ জানান, তার মেয়ে পুজা দেবনাথ(১৫) কুন্দুড়িয়া পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়ে। তারই সহপাঠী সদর উপজেলার চালতেতলার বাসিন্দা ও পাইথালীতে মামার বাড়িতে অবস্থানকারি অন্তরা পারভিনের মাধ্যমে বেউলা গ্রামের মৃত ছিদ্দিক গাজীর ছেলে ফরহাদ গাজীর সঙ্গে একমাস আগে পুজার পরিচয় হয়। গত শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে বাড়ির পাশের রাস্তার উপর থেকে ফরহাদ নৈকাটী গ্রামের রফিকুল মোড়লের ছেলে আবু মুছার মোটর সাইকেলে করে মুখ চেপে ধরে পুজাকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে অপহরণে সহায়তা করে বেউলা গ্রামের কুদ্দুস বিশ্বাসের ছেলে কাইয়ুম বিশ্বাস ও বারী মোড়লের ছেলে আসাফুল মোড়ল ।

শুক্রবার রাত ১২টার দিকে দুলা ভাই সাতক্ষীরা সদরের মেল্লেকবাড়ি গ্রামের ফরহাদের দুলাভাই এর বাড়ি থেকে ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন ও জেরির সহায়তায় পুজাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে পুজা বাড়িতে অবস্থান করছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বুধবার সকাল ১১ টার দিকে মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে সদর উপজেলার ফিংড়ির শাহীন, বুধহাটা ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মমতাজ বেগমসহ তিনজন তাকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, তারা পুলিশ ও চেয়ারম্যানকে নিয়ে পুজাকে নিতে আসছেন। বাড়ি থাকবেন। তাকে ছেড়ে না দিলে ফল ভাল হবে না বলে জানান তারা।

একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে মমতাজসহ তিনজন তাদের বাড়িতে এসে পুজা সাতক্ষীরা জজ কোর্টের নোটারি পাবলিক অ্যাড. এটিএম আলী আকবরের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পরে ফরহাদের সঙ্গে ইসলামী শরিয়ত মতে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করেন। সে অনুযায়ি মেয়েকে আটকে রাখার ক্ষমতা কারো নেই বলে হুশিয়ারি দেন তারা। এ সময় তিনি ২০০৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি লেখা পুজার জন্ম সনদ দেখিয়ে বলেন, এ ধরণের এফিডেফিড কারী কে ও কে বিবাহ রেজিষ্টার তা ভাল করে জানার চেষ্টা করেন।

এ সময় তার বলেন, হিন্দু মেয়েদের মুসলিম বানিয়ে বিয়ে করতে বয়স কোন ফ্যাক্টর নয়। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন চলে আসায় ওই তিনজন চলে যায়। ফলে মেয়ের পড়াশুনা করানো ও বাড়ির বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ করলে ফল ভাল হবে না বলে হুমকি দিয়েছে ফরহাদ ও তার সহযোগীরা।

তবে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মমতাজ বেগম হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, পুজা অপ্রাপ্তবয়স্ক এটা তার বাবার কাছে থাকা জন্ম সনদ থেকে জেনেছেন। এরপর তার চলে আসেন।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা জেলা মন্দির সমিতির সহ সভাপতি গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল বলেন, শুধু নাবালক হিন্দু মেয়েদের নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে সাবালক বানিয়ে ধর্মান্তরকরণ সাতক্ষীরা আদালতে নতুন নয়। দেড় মাস আগে আদালতে এ ধরণের বিয়ে পড়াতে যেয়ে আশাশুনির এক আইনজীবী ও জজ কোর্টের দু’ আইনজীবী সহকারি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল খেটেছেন। তবে এ ধরণের ঘটনার নায়ক আজাহারুল শেখ পালিয়ে যায়। ১০ দিন আগে একই ধরণের এক নাবালিকাকে এফিডেফিডের মধ্যেমে বিয়ের ঘোষণা দিতে যেয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্টেটের কাছে ধরা খান বহু ঘটনার নায়ক অ্যাড. এটিএম আলী আকবর। কয়েকজন আইনজীবী তাকে মুক্ত করেন।

এরপর ও কয়েকজন নোটারী পাবলিক ও বিবাহ রেজিষ্টার ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে একের পর এক নাবালিকা বিয়ে দিচ্ছেন। প্রশাসন জানার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এত বিশেষ করে পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন হিন্দুরাই। এর প্রতিরোধ গড়ে না তুলতে না পারলে ধর্মান্তরকরণ ও নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়তে থাকবে।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০)