মাদারীপুর প্রতিনিধি : ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের মস্তফাপুর সংলগ্ন পাওয়ার হাউস এর কাছে দীর্ঘদিন ধরে পৌরশহরের ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। সেই ময়লা আবর্জনা পোড়ানোর ধোয়ায় অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে দুটি ট্রাক ও একটি প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছে। এ সময় মহাসড়কে প্রায় ১ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। 

এদিকে এলাকাবাসী পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ করে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ময়লা ফেলা বন্ধের আশ্বাস দিলে এলাকাবাসী বিক্ষোভ বন্ধ করে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুর মস্তফাপুর এলাকার পাওয়ার হাউস সংলগ্ন সড়কের পাশে দীর্ঘদিন ধরে পৌর সভার ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় এর প্রতিবাদ ও প্রশাসনকে জানালেও ময়লা ফেলা বন্ধ হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঐ ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর সময় প্রচন্ড কালো ধোয়া হয়। ধোয়া আর অন্ধকারে পুরো মহাসড়ক ঢেকে যায়।

এ সময় বরিশালগামী একটি তেলবাহী ট্রাকের সাথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মিনিট খানেকের মাথায় ভুরঘাটা থেকে ছেড়ে আসা আরো একটি ট্রাকের সাথে দূর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটির সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রাইভেটকারে এক অংশে আগুন লাগলেও স্থানীয়রা সেটা নিভাতে সক্ষম হয়। এই ঘটনায় তিনটি পরিবহণের ১২ জন যাত্রী আহত হয়। আহতদের মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় ফায়ার সার্ভিসের একটি দল প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিভিয়ে ফেলে।

ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো.সালাহ উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ছুটে আসি। রাস্তার পাশের আগুন নিভিয়ে ফেলি। দেরি করলে হয়তো তেলবাহী ট্রাকে আগুন ধরে যেতো।'
স্থানীয়রা বিক্ষোভ করে জানান, পৌরসভার ময়লা কেন আমাদের এখানে ফেলা হয়। তাও আবার মহাসড়কের পাশে। এটা কেমন নিয়ম।

তারা আরো জানান, প্রায় ৬ মাস ধরে এই মহাসড়কের পাশে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ফেলা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নকর্মীরা সেই ময়লায় যখন আগুন দেয়, তখন আমরা এলাকাবাসীরা কালো ধোয়ায় বাড়ীতে থাকতে পারি না। আমাদের সন্তানদের বিভিন্ন সমস্যা হয়। আজ যদি তেলের গাড়ীতে আগুন লাগত, তাহলে কি হতো। কারণ পাশে বিদ্যুৎ অফিসের পাওয়ার হাউজ ছিল। কি অবস্থা হতো তা ভাবতেই আমরা শিউরে উঠি।

মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন আব্দুল কুদ্দুস মল্লিক জানান, আমি একাধিকবার জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আজ এই দুর্ঘটনা। আমি যা দেখলাম এখানে, অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো, আল্লাহ রহমত করছেন।

মাদারীপুর ট্রাফিক পুলিশ সার্জন ইমন হোসেন রাসু জানান, ময়লার আগুনে ধোয়ার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে প্রাইভেটকার ও তৈলবাহী ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাইভেটকার আগুনের মধ্যে ঢুকে যায়। এসময় প্রাইভেটকারে আগুন লাগে। স্থানীয়দের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এদিকে ততক্ষণে মহাসড়কের দুইপাশে গাড়ী আটকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস জানান, 'পৌরসভার আবর্জনা সড়কের পাশে পোড়ানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলা হয়েছে। আগামীতে সড়কের পাশে এসব ময়লা ফেলানো ও পোড়ানো বন্ধ রাখা হবে।'

এ ব্যাপারে মাদারীপুর পৌসভার মেয়র মো. খালিদ হোসেন ইয়াদ এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে সে ফোন রিসিভ করেননি।

(এএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০)