স্টাফ রিপোর্টার : ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগই দেশের আনাচে কানাচে আলিশান বাড়ি বানাচ্ছেন। কেউ আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিতে ইয়াবা ব্যবসার টাকায় অন্য উপজেলায় গড়ে তুলেছেন রাজ প্রাসাদ আর বড় বড় অট্টালিকা।

এমনই একটি অভিযোগ পড়েছে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের কাছে। জানা যায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নিবার্হী অফিসারের কাছে স্থানীয়দের পক্ষে আবদুল ফোরকান, নোয়াজিস চৌধুরী ও খালেকুজ্জামান খান নামে কয়েকজন ব্যক্তি একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের স্বপক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণে অনুলিপি দেওয়া হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, সিএমপি পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের আমানশাহ পাড়া জামে মসজিদের পেছনে হাজী আহমদ আলীর বাড়ি সংলগ্ন সেকান্দর আলীর বিল্ডিং-এর পার্শ্বে নির্মাণ করা হচ্ছে কয়েকটি আলিশান ভবন। তড়িগড়ি করে রাতের আধারে এসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মানাধীন এসব প্রাসাদসম ভবন/বাড়িগুলো দেখে স্থানীয় মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কি করে অপরিচিত লোক শিকলবাহা এসে প্রশাসনের নাকের ডগায় জমি নিয়ে রাতারাতি ভবন নির্মাণ করছে। এ নিয়ে নানা জনের নানা প্রশ্নে শোরগোল পুরো উপজেলা।

এলাকায় এমন খবরটি ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কেনোনা অনেকে কানাঘোষা করছেন, টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়িরা কতিপয় কিছু স্থানীয় লোককে আতাঁত করে কর্ণফুলীতে এসব বাড়ি নির্মাণ করছেন। সর্বত্রই আলোচনা হচ্ছে শিকলবাহায় এসব রাজপ্রাসাদ কারা তৈরি করছেন? তাদের ব্যবসা কিংবা পরিচয় কি! এ নিয়ে বেশ চায়ের দোকানেও আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে অজপাড়াগাঁয়ে কারাই বা নির্মাণ করছে এসব বিলাসবহুল বাড়ি।

সূত্র জানায়, ইয়াবা কারবার করে অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হচ্ছে অনেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে টেকনাফে অনেকে আলিশান বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। এটাও হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির দায়ের করা মামলায় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করে বাড়িঘর ক্রোক করা হয়েছে। কিন্তু কর্ণফুলী উপজেলায় একের পর এক অধিক মাদক কারবারিদের বড় বড় আলিশান বাড়ি ঘরের অস্বিস্ত মিললেও পুলিশের ভূমিকা ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে এলাকার শিক্ষিত সচেতনমহল স্কুল কলেজে পড়া সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে উর্ধ্বতন প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, মাদকের নিরাপদ জোন হিসাবে গড়ে তুলতে খাল সংলগ্ন ইউনিয়ন শিকলবাহায় একটি গ্রুপ সব সময় মাদক পাচারের সাথে জড়িত রয়েছে। যারা আলিশান বাড়ি তৈরি করছে তাদের মধ্যে কামাল, জামাল ও ইয়াছিন নামে তিনজন লোকের সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া যায়। ইয়াছিনের পরিবারের একেকজন সদস্য আবার একেক জায়গার ভোটার। এরা রাতের আধারে কালো গাড়িতে করে এলাকায় আসে আবার চলে যায়। শিকলবাহা বোর্ড স্কুলের পাশে তাদের আরো একটি দ্বিতলা বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও বিল্লাপাড়া শফি মেম্বারের বাড়ির পাশে আরেকটি নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। জানা যায়, রোহিঙ্গাদের সাথে তাদের দহরম মহরম সম্পর্ক।

সরকার মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে নানা পদক্ষেপ নিলেও কিছু রোহিঙ্গা ও মাদক কারবারিদের কারণে বারবার উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটছে। যেমন কিছুদিন আগে শিকলবাহা কবরস্থানে এক লাখ পিস ইয়াবা জব্দ, বারবার অজ্ঞাত লাশের সন্ধান মিলছে। সবকিছুই নাকি মাদকের সাথে যোগসূত্র রয়েছে।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত কামাল ও ইয়াছির নামে ব্যক্তিদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা জানান, আমাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিয়েছে কিনা জানি না তবে আমরা ব্যবসা করি কোন মাদকের সাথে জড়িত নই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি আলমগীর হোসেন বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা হচ্ছে কিনা আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। কেনোনা মাদক নিমূর্লে সরকার ও পুলিশ বাহিনী সব সময় জিরো টলারেন্সে রয়েছে।

লিখিত অভিযোগের সত্যতা জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওসিকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০)