রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অধীনে কালিয়া পৌরসভার শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই সংশ্লিষ্ট এলাকার নদীর তীরে জেগে উঠেছে চর। চরের ওপরই প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ নামে মাত্র বাস্তবায়নে চরম অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রের অভিযোগ। ফলে বাঁধ নির্মাণের নামে যাচ্ছে তাই ভাবে হচ্ছে টাকা খরচ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নড়াইলের পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া পৌরসভার পশ্চিম কোল ঘেষে নবগঙ্গা নদী প্রবাহিত। পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের নদীর তীর সংলগ্ন এলাকা বড়কালিয়া,নাওরা ও বৃহাচলা গ্রামে প্রায় দুই দশক আগে থেকে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে ঠিকাদারের মাধ্যমে একের পর এক প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে কাজ করেছেন। সে সব প্রকল্পে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের আংশিক উপকার হয়েছে। কিন্তু ওই ভাঙ্গনের উত্তরে প্রবল ভাঙ্গন রোধের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।

প্রাকৃতিক ভাবে দুই বছর আগে নদীর তীরের পৌরসভার বড়কালিয়া, নাওরা ও বৃহাচলা গ্রামের চরের ওপরই শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নে নড়াইল পাউবো ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে দরপত্র চূড়ান্ত করেন। এতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের কাজটি পেয়েছেন খুলনার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমিন এন্ড কোং। প্রকল্পটি ৩টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। ওই ঠিকাদারের নিকট থেকে নড়াইলের ঠিকাদার লাভলু সরদার প্রকল্পের দক্ষিণ অংশ এবং খুলনার ঠিকাদার রনি বাকি ২টি অংশে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছেন।

অভিযোগ প্রকাশ, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় চর জেগে ওঠায় ওই প্রকল্পটি এখন অপ্রয়োজনীয় ও অবাস্তব। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৩ মাস আগে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সবচেয়ে আজগুবি ব্যাপার হচ্ছে, ইতোমধ্যে শুধুমাত্র জেগে উঠা চরের ওপর যৎ সামান্য কিছু ব্লক ফেলেই নদী ভাঙ্গন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সামান্য কিছু কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় এটা অসম্ভব ব্যাপার।

এখানকার কাজে পুকুর চুরি হয়েছে। ঠিকাদার ও পানিউন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের যোগসাজসে প্রকল্পটিতে লুটপাট করছেন । দুই বছর আগে থেকেই এখানে চর পড়া শুরু হয়। এর পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেনে শুনে সরকারি টাকা অপচয় তথা আত্মসাতের উর্দেশ্যে এমন কাগুজে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন! সরকারি কোটি কোটি টাকা‘দরিয়া’তেই ঢালা হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে জেগে উঠা চরের ওপর নদীভাঙ্গন প্রকল্প নামেমাত্র বাস্তবায়নে এ খাতে বরাদ্দকৃত টাকার পুরোটাই লোপাট হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পটির নির্দিষ্ট স্থান নদীর তীরবর্তী এলাকাজুড়ে বৃহৎ বালুচর যা প্রায় দুই বছর আগে জেগে উঠেছে। জেগে উঠা বৃহৎ চরের ওপরই কিছু সংখ্যক ব্লক ফেলা হয়েছে। সেখানে বালুর বস্তা ফেলার কোন নমুনা পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কথা ও কাজের মধ্যে কোন মিল খুজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সচেতন মহল বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক অধিবাসী গ্রামের কাগজকে বলেন, এ কেমন নিয়ম ? ওই প্রকল্পের নদীর পশ্চিম তীরসংলগ্ন বাবরা হাচলা ইউনিয়নের শুক্তগ্রাম বাজারসহ ফসলি জমি এবং এর দক্ষিণে কালিয়া পৌরসভার উথলিগ্রাম নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ এলাকার গ্রামগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে বাঁধ দেয়ার কোন উদ্যোগ নেই। অথচ দাপ্তরিক নিয়ম-নীতির কথা উল্লেখ করে জেগে উঠা চরের ওপর অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তা ব্যক্তিরা অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছেন বলে একাধিক অভিযোগ।

এ প্রসঙ্গে নড়াইল জেলা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ নেওয়াজ তালুকদার বলেন, এ প্রকল্প বাতিল বা স্থানান্তরের কোন সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬০ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে ওই জেগে উঠা অস্থায়ী চরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কেটে টেন্ডারকৃত প্রকল্পের চলমান কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।

(আরএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০)