স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়াকে শেয়ারবাজারের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিজয়নগরের এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান এ কথা বলেন। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান, নির্বাহী সদস্য মাহবুব এইচ মজুমদার, নুর আহামেদ, মো. হামদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টানা পতনের মধ্যে বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে সম্প্রতি বাজার মধ্যস্থতাকারীদের একটি দল সরকারের কাছে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য একটি তহবিল গঠনের আবেদন করেন।

মূলত তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রত্যেক ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে।

নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধে সময় পাবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ নির্দেশনা জারির পাঁচ দিনের মাথায় সাংবাদ সম্মেলনে আসল বিএমবিএ। এতে সংগঠনের সভাপতি ছায়েদুর বলেন, ‘আমরা সকলেই অবহিত রয়েছি যে, দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার অনুকূল ছিল না। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে বোঝা যায়, বাজারে অর্থের জোগান কম ছিল। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণের সুযোগের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম। কোনো প্রকার দান বা ভর্তুকির প্রস্তাব করিনি।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজার উন্নয়নের উদ্যোগ নেন। যার প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক এক যুগান্তকারী নীতি সহায়তার সার্কুলার দিয়েছে। যা ইতিমধ্যে বিনিযোগকারীদের আগ্রহ ও সাহস যোগাচ্ছে।’

এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএমবিএ সভাপতি। তিনি বলেন এটি (বিশেষ তহবিল) নিয়ে অপপ্রচারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। লক্ষ্য করা যায় যে, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন না করে কিছু ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যা বা উপস্থাপনা হচ্ছে। যা বিনিযোগকারী তথা অংশীজনের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে।

কী ধরনের অপপ্রচার হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি দুই-একজন ব্যক্তির বক্তব্য এমন ছিল এটা ব্যাংকের ওপর বার্ডেন (বোঝা)। এটা বার্ডেন কেন হবে? আবার এমনও বক্তব্য শুনেছি এটা ট্যাক্সের টাকা। এটা ট্যাক্সের টাকা কেন হবে? আবার একটি সংবাদ মাধ্যমে আসছে আবেদন বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের কিছু ভুল ব্যাখ্যা চলে আসছে।

পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএমবিএ সভাপতি।

এর মধ্যে রয়েছে-

> পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।

> মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিযোগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা ব্যবস্থা করা।

> আইসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি।

> বাজারে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।

> প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্দ্যোগ গ্রহণ।

> বাজারে আরও ভালো ও মানসম্পন্ন আইপিও তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে বহুজাতিক কোম্পানি ও সরকারি লাভজনক কোম্পানি তালিকভুক্তির উদ্দ্যোগ নেয়া।

ছায়েদুর বলেন, আমরা আশা করি এ বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে এবং পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হবে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। ইতিমধ্যে কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে যা বাজারের গভীরতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

এ সময় বহুজাতিক ও বেসরকারি খাতের স্বনামধন্য কোম্পানির বাজারে তালিকাভুক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক থেকে সহজে অর্থের যোগান হয়ে যায় বলে পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার কঠিন প্রয়োগে কিছু ব্যবসায়ীরা পুঁজিবাজারে প্রবেশ করতে চায় না। অথচ স্বল্প মেয়াদ আমানত নিয়ে ব্যাংকগুলো দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ সরবরাহ করছে, যা তারল্যে অসামাঞ্জস্যতা তৈরি করে।

আইপিওর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাব এবং আইপিওর মান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। কিন্তু সুনির্দিষ্ট পরিমাপ বা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ উপস্থাপিত হয় না। বর্তমানে একটি আইপিও প্রায় ৪০০ তথ্য ও শর্ত পালন ও প্রকাশ করে আইপিওতে আসে। সে ক্ষেত্রে যদি আরও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা শর্ত যোগ করার প্রয়োজন মনে হয় বা করলে মান উন্নত হয় সে বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশনে পাঠানো যেতে পারে।

শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে বিএমবিএর নতুন নেতৃত্ব আটটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান ছায়েদুর রহমান।

এর মধ্যে রয়েছে-

> সতেচন বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা প্রসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।

> সরকারের নীতি-নির্ধারণী পক্ষগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও সমন্বয় করা। প্রয়োজনীয় আইন পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সুপারিশ করা।

> পুঁজিবাজারের সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাপেক্ষে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সমুন্নত রাখা।

> ভালো উদ্যোক্তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো।

> পুঁজিবাজারের আকার বৃদ্ধিতে গুণগত মান সমৃদ্ধ বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করা।

> পুঁজিবাজারের সার্বিক মূল্যায়নের জন্য সকল অংশীজনের সমন্বয়ে প্রতি ছয় মাসে একটি বহৎ সেমিনার করার উদ্যোগ নেয়া।

> আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত/প্রচলিত অথচ আমাদের পুঁজি বাজারে অনুপস্থিত সেই সব বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করা এবং প্রয়োজনীয় আইনের জন্য সুপারিশ করা।

> বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমন্বয়ে বছরে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার করা।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০)