স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার বন্দি জীবনের কথা উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বেগম জিয়া টেলিভিশনের পর্দায় আসলে অন্ধকার ঘর আলোতে ঝলমল করত। সেই মানুষটি এখন ধীরে ধীরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন এবং আস্তে আস্তে নিঃশেষ হচ্ছেন। তিনি বলেন, লড়াই ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। লড়াইয়ের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে।

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণতন্ত্র ফোরাম আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

মান্না বলেন, যদি মনে করেন, জীবন বাঁচানোর জন্য যেকোনো মূল্যে আমরা বেগম জিয়ার মুক্তি চাই, সেই মূল্য এই সরকার দেবে না। একটা মানুষের মধ্যে মূল্যবোধই যদি না থাকে তাহলে কীভাবে মূল্য দেবে। যদি সরকারের মধ্যে সামান্য পরিমাণ কোনো মূল্যবোধ থাকত তাহলে তারা এত বড় নিষ্ঠুর হতে পারত না। এই জন্যই লড়াই ছাড়া কোনো বিকল্প আছে বলে আমি মনে করি না। তাই আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনারা কীভাবে বেগম জিয়াকে মুক্ত করবেন।

তিনি আরও বলেন, আপনাদের যদি ঐক্যফ্রন্ট ভালো না লাগে, আপনাদের কাছে যদি মনে হয় আর কারও দরকার নেই, আমরা নিজেরাই পারব তাও ঠিক। কিন্তু বেগম জিয়ার মুক্তি কিন্তু লড়াই ছাড়া হবে না। লড়াইয়ের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

বেগম জিয়া সারাদেশের নেত্রী উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘বেগম জিয়াকে আমিও নেত্রী মানি। আমি যখন দুবছর কারাগারে ছিলাম তখন তিনি যেখানে সুযোগ পেয়েছেন আমার মুক্তির কথা বলেছেন। আমার একটা কৃতজ্ঞতাবোধও আছে। আমি মনে করি এবং সবাই মনে করে, খুবই অন্যায়ভাবে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, তার মুক্তির পথে আইনের কোনো বাধা নেই। তাহলে তিনি জামিন তো পেতেই পারেন। কিন্তু দেয়া হচ্ছে না।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, আপনারা বলছেন, আপনারা বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা চান এবং নিঃশর্ত মুক্তি চান। সত্যিই কি আপনারা নিঃশর্ত মুক্তি চান? তাহলে ফোন করলেন কেন? কী কথা হয়েছে ফোনে?

তিনি বলেন, আজকে প্রথম আলোতে হেডিং করা হয়েছে ‘খালেদা জিয়ার কারামুক্তি সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পায়নি বিএনপি।’ ওরা এ রকম লিখল কেন? কোন সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল? সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসবেন? আমি যেখানে সুযোগ পেয়েছি সেখানে বলেছি, আজ আবারও বলছি, আজকে যদি ঘোষণা হয় আগামীকাল সকাল ১০টায় বেগম জিয়া পিজি হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাবেন, তাহলে পিজি হাসপাতালে তাকে দেখতে এত মানুষ হবে যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জায়গা দিতে পারবে না। একটার পর একটা দুই নাম্বারি করে এই সরকার ক্ষমতায় আছে। আর বেগম জিয়াকে মুক্তি দেবে সেটা কল্পনা করা যায়? এটা কখনও সম্ভব নয়।

ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, তিনদিন আগে পত্রিকায় জানতে পারলাম, বেগম জিয়ার বোন তার সঙ্গে দেখা করে বাইরে এসে বললেন, তার একটি হাত বেঁকে গেছে আর একটি হাত বেঁকে যাচ্ছে। উনি ঠিকমতো দাঁড়াতে পারেন না, খেতে পারেন না।

মান্না বলেন, বেগম জিয়া টেলিভিশনের পর্দায় আসলে অন্ধকার ঘর আলোতে ঝলমল করত। সেই মানুষটি এখন ধীরে ধীরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন এবং আস্তে আস্তে নিঃশেষ হচ্ছেন। আমি কিন্তু মনে করি না, বেগম জিয়া একা তিনি অসহায়। বেগম জিয়া বাংলাদেশের সবচাইতে সম্পদশালী রাজনীতিবিদ যার পেছনে ১৭ কোটি মানুষ আছে। এই ১৭ কোটি মানুষকে মুক্তির আন্দোলনের জন্য সঙ্গবদ্ধ করে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তাহলে আপনারা জিতবেন।

গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিস ইসলাম, রাজিয়া আলিম, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণর বিএনপির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০)