রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ১৫ বছর বয়সী হিন্দু সম্প্রদায়ের নবম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্মান্তরিত কাে পাচারের চেষ্টার অভিযোগে এক নোটারী পাবলিকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করায় ওই ছাত্রীকে আবারো অপহরণ করা হয়েছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার পাইথালী গ্রামে এ ঘটে।

এদিকে সাতক্ষীরায় একের পর এক হিন্দু নাবালিকা মেয়েকে অপহরণের পর ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের পাইথালী গ্রামের এক কৃষক জানান, তার মেয়ে কুন্দুড়িয়া পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। গত ৭ ফেব্র“য়ারি সকাল ১০ টার দিকে বাড়ির পাশের রাস্তার উপর থেকে বেউলা গ্রামের ছিদ্দিক গাজীর ছেলে ফরহাদ গাজী, নৈকাটী গ্রামের রফিকুল মোড়লের ছেলে আবু মুছা, বেউলা গ্রামের কুদ্দুস বিশ্বাসের ছেলে কাইয়ুম বিশ্বাস ও বারী মোড়লের ছেলে আসাফুল মোড়ল জোরপূর্বক তার মেয়েকে অপহলণ করে।

রাতে তাকে সদর উপজেলার মেলেকবাড়ি গ্রামের খোকন গাজীর ছেলে আসাদুল গাজীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। পওে তারা জানতে পারেন যে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের নোটারী পাবলিক অ্যাড. এটিএম আলী আকবর তার মেয়েকে এফিডেফিডের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করেছেন। ১২ ফেব্র“য়ারি মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে সদর উপজেলার ফিংড়ির শাহীন, আশাশুনির ইউসুফপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম, বুধহাটা ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মমতাজ বেগমসহ সকল অপহরণকারিরা তার মেয়েকে আবারো তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে তিনি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অ্যাড. এটিএম আলী আকবর, ফরহাদ গাজীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুালে মামলা দায়ের করেন। আদালত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। একইসাথে ওই নোটরী পাবলিকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই কৃষক অভিযোগ করে বলেন, মামলা করার পর তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল আসামীরা। এরই জের ধরে সোমবার রাত ৮টার দিকে চারটি মোটর সাইকেলে এসে ফরহাদ, মুছা, আসাদুল, শহীদুল, কাইয়ুম, আসাফুলসহ কয়েকজন অস্ত্রের মুখে তার স্ত্রী ও দু’ পুত্রবধুকে মুখে জিম্মি করে মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। চলে যাওয়ার আগে তারা মেয়েকে ফরহাদের সঙ্গে মুসলিম ধর্মমতে বিয়ে দিয়ে পাচারের হুমকি দিয়ে চলে যায়। একইসাথে আদালতের মামলা তুলে নানিলে ফল ভাল হবে না বলে জানায় তারা।

জানতে চাইলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, বিষয়টি তাকে কেউ জানায় নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে মানবাধিকার সংগঠণ স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মধাব চন্দ্র দত্ত, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউণ্ডেশনের সদস্য রঘুনাথ খাঁ, জয়মহাপ্রভু সেবক সংঘের সভাপতি গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল, সাতক্ষীরার নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাতক্ষীরার শাখার সম্পাদক জ্যোস্না দত্ত এ ধরণের ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরণের ঘটনা সংখ্যালঘু হিন্দুদের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০)