শিতাংশু গুহ


ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে কি বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বলা যায়? বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যা ভাষার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। আর সেই ভাষার পক্ষে প্রথম আনুষ্ঠানিক বক্তব্য শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’র। পাকিস্তান স্বাধীন হয় ১৪ আগষ্ট ১৯৪৭। মাত্র ছয় মাসের মাথায় করাচিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্পষ্ট ভাষায় দাবি তুলেন- বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হোক। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, 'সেই দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়, ভাষা আন্দোলনের সূচনা ঘটে'। মুখ্যত, ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে দেশ স্বাধীন হয়। এটাই ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু এর বাস্তবায়ন করেন। সেই অর্থে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। মহান একুশ বাংলা ভাষার জয়গাথা। অথচ ফেব্রুয়ারি মাসেও ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত অবহেলিত থাকেন, তাকে কেউ খুব একটা স্মরণ করেন না, করতে চান না?

ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি এরোমা দত্ত বাংলাদেশে পরিচিত, এমপি। ২০১৭-র জানুয়ারির ৩১ তারিখে তিনি জানান, ‘পাকিস্তানের প্রথম অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশনে তার দাদু রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে দাবি তুলেন। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের মানুষ এখন এর ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যার যা প্রাপ্য তাকে তা দিতে হবে। ১৯৪৮ সালে ‘ভাষা আন্দোলনের’ সূচনা করে নতুন জাতি বাংলাদেশ সৃষ্টিতে তার অবদানকে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি যোগ করেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ’ পেতে সঠিক ইতিহাস পুনঃরুদ্ধার প্রয়োজন।’ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পূর্ণাঙ্গ ভাষণটি এখন ইন্টারনেটে সহজলভ্য, যা ইংরেজিতে। এর সুললিত বাংলা নেই, হয়তো, এ মকরণেই বলা হয়, তিনি সত্যিই অবহেলিত! বাংলা একাডেমি কেন ওই ভাষণের বাংলা করেনি?

বঙ্গবন্ধু ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদান স্বীকার করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়: ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সাল। করাচিতে কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সভায় পাকিস্তানের সংবিধান নিয়ে বৈঠক হচ্ছিল। সেখানে রাষ্ট্রভাষা কী হবে সেই বিষয়েও আলোচনা চলছিল। মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষপাতী। পূর্ব-পাকিস্তানের অধিকাংশ লীগ সদস্যেরও সেই মত। কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি করলেন- বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হোক। কারণ, পাকিস্তানের সংখ্যাগুরুর ভাষা হলো বাংলা। লীগ সদস্যরা কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। আমরা দেখলাম বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনীর টীকাভাষ্যে বলা হয়েছে: ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬-১৯৭১) আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৪৬ সালে কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তান গণপরিষদে ইংরেজি ও উর্দু ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাকেও সমান মর্যাদা দানের দাবি জানান। এই দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। এই সূত্রে পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে গঠিত পূর্ববাংলা সরকারের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তাকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রাজনৈতিক শহীদ। ২৭ বা ২৯ মার্চ কোন তারিখে পাকিস্তানী বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়, তা এখনো অস্পষ্ট। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনীতে টিকাভাষ্যে লেখা হয়েছে, ২৭ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তার কুমিল্লার বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। উইকিপিডিয়া বলছে, ২৯ মার্চ ১৯৭১। এরোমা দত্ত বলছেন ২৯শে মার্চ ১৯৭১। তাঁর মেয়ে মনীষা পুরোকায়স্ত কলকাতায় থাকেন, তার কি অভিমত? ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রথম জীবন সম্পর্কে উইকিপিডিয়া জানায়, ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইলে তার জন্ম। বাবা জগবন্ধু দত্ত আইনজীবী ছিলেন এবং তার হাতেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আইনি পেশায় হাতেখড়ি। তিনি নবীনগর হাইস্কুল, কুমিল্লা জিলা স্কুল ও কলকাতার রিপন কলেজে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবন শুরুতে তিনি কুমিল্লার বাঙ্গরা হাইস্কুলের সহকারী হেডমাস্টার ছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি কুমিল্লা বারে যোগ দেন। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল কঠোর। ধর্মের ভিত্তিকে ভারত বিভাগ এবং পাকিস্তান সৃষ্টির বিপক্ষে ছিলেন শহীদ দত্ত। কিন্তু দেশ বিভাগ অনিবার্য হয়ে গেলে তিনি পূর্ব-পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই নতুন এই দেশটির সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে তাকে নেয়া হয় দেশটি আইনগত খসড়া কাঠামো তৈরির জন্য। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলায় কথা বলে, তাই আমার বিবেচনায় বাংলা হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা।’ তার এই বক্তব্যকে জিন্নাহর ‘উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণার প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বলা যায়। তাকে ‘ভাষা আন্দোলনের জনক’ বললেও বেশি বলা হবে না। আমরা চাই বা না চাই, ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে গেছেন।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। একুশে পদক পাননি। জানা যায়, তাকে ২৯ মার্চ ২৯৭১ সালে পাকিস্তানি দুজন ক্যাপ্টেন নাসিম মালিক ও আগা বোখারি উঠিয়ে নিয়ে যায় বা হত্যা করে। আরো একটি মতবাদ আছে যে, তাকে বেশ কিছুদিন প্রচণ্ড অত্যাচারের পর পঙ্গু অবস্থায় হত্যা করা হয়। তার নিখোঁজ বা মৃত্যু নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো তদন্ত হয়নি। এই মহানায়কের মৃত্যুরহস্য উন্মোচন হওয়া দরকার। উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তান পার্লামেন্টে ভাষণে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেন। বাংলাপিডিয়া বলছে, তারিখটি ২৫ আগস্ট ১৯৪৮। বাংলাপিডিয়া বা উইকিপিডিয়া এনসাইক্লোপিডিয়া নয়। সরকার কখনো বিষয়টি নিয়ে ভাবেনি। এসব কারণেই অভিযোগ যে, তিনি অবহেলিত! ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৫৬-৫৮ সালে আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকালে তাকে গৃহবন্দি করা হয় এবং ‘নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে ঘোষণা করা হয়, কারণ তাঁর নাম ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত! এই যে 'নিরাপত্তার জন্যে হুমকি'-এটি এক ধরণের অত্যাচার, হিন্দুকে বলা যে, তোমরা দেশের শত্রূ।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের তিন দিন পর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গ্রেপ্তার হ’ন এবং তাকে হত্যা করা হয়? তার ছেলে দিলীপ কুমার দত্তকেও হত্যা করা হয়। দত্তের উত্তরসূরিরা কি তাদের প্রিয়জনের দেহাবশেষ দাবি করতে পারেন না? আধুনিক যুগে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া কি খুবই অসম্ভব? তবে বাংলা একাডেমির ওয়েবসাইট খুঁজে আমি অন্তত ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে খুঁজে পাইনি। অনেক মহারথীর ছবি আছে, মাইনাস শুধু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ইমেজ গ্যালারিতেও খুঁজলাম, পেলাম না! তবে ২ নভেম্বর ২০১৪ বাংলা একাডেমি ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১২৮তম জন্মদিন পালন করেছিল। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন যে, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল ছিলেন। তিনি ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিসংগ্রামী। ১৯৪৮ সালে তিনি সততা, সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমিরেট প্রফেসর আনিসুজ্জামান এবং প্রফেসর শামসুজ্জামান খান স্বাগত ভাষণ দেন, মূল প্রবন্ধ ‘একাগ্র দেশব্রতী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ পাঠ করেন প্রফেসর শফিউল হাসান। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি এরোমা দত্ত এ সময় দাদুর নানা দিক তুলে ধরেন।

নিউইয়র্কের ওল্ড ওয়েস্টব্যারির প্রফেসর ড. সব্যসাচী ঘোষ দস্তিদার তার ‘অ্যাম্প্যায়ারস লাস্ট ক’জালটি’ বইয়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার বইয়ে বলা হয়েছে: ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত: দি ফাদার অব দি আইডিয়া অব বাংলাদেশ।’ তিনি লিখেছেন, ‘কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায় তার শ্মশান পরিদর্শকালে আমার আবার মনে হলো কীভাবে হিন্দুরা উপেক্ষিত হয়। দত্তবাবু হিন্দু, তিনিই প্রথম পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবি তুলেছিলেন। ভাষার প্রতি তার ভালোবাসার চূড়ান্ত পরিণতি স্বাধীন বাংলাদেশ। তার এই স্বপ্নপূরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।’ ‘একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী দত্ত ও তার ছেলেকে টেনে-হিঁচড়ে ধরে নিয়ে যায়, তাদের আর খোঁজ মেলেনি।’ লেখক দুঃখ করে বলেছেন, “অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে এই মহান নেতার বাড়িঘর ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে বাজেয়াপ্ত হয়।” তিনি তুলনা করে বলেন, আমেরিকায় জর্জ ওয়াশিংটনের বাড়িঘর ‘শত্রু-সম্পত্তি’ হয়ে গেছে কি ভাবা যায়?

এই লেখককে ধন্যবাদ জানিয়ে এরোমা দত্ত ১১ অক্টোবর ২০০৯ সালে এক চিঠিতে লিখেছেন, মান্যবর অধ্যাপক, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে বর্ণনা করায় আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার লেখাটি পরে আমি কেঁদেছি। আমি কৃতজ্ঞ, আপনি সঠিকভাবে ইতিহাস তুলে ধরেছেন। কিন্তু এখন ইতিহাস ভুলদিকে ধাবিত হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হচ্ছে, যা আমাকে পীড়া দেয়। সমগ্র জাতির উচিত ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। কিন্তু ক্বচিৎ কেউ তাকে মনে রাখে। তার অবদানে কেউ মনে রাখে না। বরং পরিকল্পিতভাবে তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে। অস্টিন পিয়ে স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামান মানিক বাংলাদেশ অবজারভার-এ সোমবার ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের ওপর এক নিবন্ধে শ্রী দত্তের ভূমিকা তুলে ধরেন। প্রায়ত: মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী সম্প্রতি এশিয়ান ট্রিবিউন পত্রিকার কয়েকটি পর্বে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের’ ওপর বিশদ আলোচনা করেছেন। আরো অনেকে হয়তো ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে নিয়ে লিখেছেন যা আমার জানা নেই। তবে এটুকু জানি, বাঙালি ভাষাভাষী থাকলে তাকে নিয়ে ভবিষ্যতে আরো বহু লেখা হবে। গবেষণা হবে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে বাদ দিয়ে যেমন বাংলা সাহিত্য কল্পনা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধু, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বা ভাষা শহীদদের বাদ দিয়ে ‘মহান একুশ’ কল্পনা করা যায় না।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত-কে এই অবহেলার কারণ কি তার ধর্ম?

বহির্বিশ্বে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত-কে নিয়ে তেমন কর্মকান্ড নেই? তবে নিউইয়র্কে ২০১৮-তে ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পরিষদ, গঠিত হয়েছে। এঁরা কলকাতা ও দেশের দেশের বাইরে প্রথম ২রা নভেম্বর ২০১৮-তে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত-র জন্মজয়ন্তী পালন করেন। ১৯৯৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারক গ্রন্থের জন্যে একটি বাণী দিয়েছিলেন, তাতে তিনি বলেন: ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই সর্বপ্রথম পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ভাষার যথাযথ মর্যাদার দাবি করেছিলেন। এরফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বলিষ্ঠ হয়েছিলো। যার পরিণতি বাহান্নর একুশে ফেব্রূয়ারি। ভাষা আন্দোলন ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদেরসেই ভিত্তি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রূপ নেয়, মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধে। ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথম সারির শহীদের মধ্যে একজন। সমগ্র জাতি তার কাছে ঋণী, সেই মহান পুরুষের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কাছে আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তার আত্মত্যাগ ও মহানুভবতা জাতি চিরকাল স্মরণ করবে’।

[কৃতজ্ঞতা: ঢাকার দৈনিক ভোরের কাগজ, নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক ঠিকানা এবং দেশে বিদেশে বেশ ক‘টি মিডিয়ায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত-কে নিয়ে আমার বেশ ক’টি কলাম গত ক’বছরে প্রকাশিত হয়েছে। এ লেখা ওসব সমন্বয় করে সাজানো হয়েছে। দিল্লীতে ২৩-২৪ নভেম্বর ২০১৯-এ অনুষ্ঠিতব্য ‘আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সমিতির ৪র্থ বাৎসরিক অধিবেশন’ উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিনের জন্যে লেখা।]

লেখক : আমেরিকার নিউইয়র্ক প্রবাসী।