মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : প্রবাসী অধ্যুসিত পর্যটন জেলা মৌলভীবাজার শহরে শিশুদের বিনোদনের জন্য খুব একটা সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। বিভিন্ন দেশে থাকা এখানকার প্রবাসীরা নারীর টানে চলে আসেন নিজ শহরে। দেশে এসে নিজের আত্মীয় স্বজনের খোজ খবরের পাশা পাশি বিকেল বেলা একটু ফুসরত পেলেই সন্তানদের নিয়ে একটু ঘুরে বেড়াতে চান, কিন্তু দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা এই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সন্তানদের বিনোদনের জন্য এখানে নেই কোন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। 

২০১২ সালের ১৭ নভেম্বর সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার শহরের জেলা প্রশাসক শিশু পার্কটি। মূলত তৎকালিন জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমানের প্রচেষ্ঠায় শহরের প্রাইমারী ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (পিটিআই) সড়কে অবস্থিত এক সময়ে পর্যটন কর্পোরেশনের তত্বাবধানে থাকা রেষ্ট হাউজ হিসেবে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত ভবনকে ঘিরে শহরের শিশুদের জন্য পার্ক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

উদ্যোগ নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে সেটিকে সংস্কার করে শিশুদের খেলাধুলা ও পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য বেশ কিছু রাইড ক্রয় করাও হয়েছিল। ২০১২ সালের উদ্বোধনের পর এই পার্কেই আয়োজন করা হয় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ জাঁকজমক ভাবে প্রথমবারের মত পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বর্ষবরণ ও পিঠা উৎসব। এর কিছুদিন পর্যন্ত শহরের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সীদের পদভারে মুখর থাকলেও কিছুদিন যেতে না যেতে ভাটা পড়ে এসব আয়োজনে। শহুরে বিনোদনের এই পর্যটন স্পটটি শেষ পর্যন্ত মুখ থুবরে পড়ে আছে। পার্কটি উদ্বোধনের পর সেখানের নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে কয়েকজন কেয়ারটেকার থাকলেও এখন আর তাদের দেখা পাওয়া যায়না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,ইট,বালি আর সিমেন্ট দিয়ে তৈরি ছাতার মত ৫টি বসার স্থান, শিশুদের বেশ কয়েকটি দোলনা ও স্টিল দিয়ে তৈরি কয়েকটি বসার স্থান রয়েছে পার্কটিতে। রয়েছে পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত একটি পাবলিক টয়লেট।

পার্কটির মধ্যে থাকা একমাত্র ভবনটিও পরিত্যক্ত। দরজা-জানালাবিহীন দু’তলা ভবনটির বিভিন্ন কক্ষের দেয়াল এবং ছাদের কার্পেটের টেম্পার চলে যাওয়ার কারনে দেয়াল থেকে খসে পড়ছে। যেকোন মুহুর্তে সেগুলো ধ্বসে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। নীচতলার যে কক্ষটিতে কেয়ারটেকাররা থাকতেন সেখানে দেখা যায় বড় আকারের একটি ডায়েনিং টেবিলা আর ফাইল-পত্র রাখার জন্য একটি কেবিনেট আলমিরা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

বছরখানিক পূর্বে ঐ পার্কটিতে গেলে দেখা যায় সবকিছুই পরিত্যাক্ত আর চারদিকে ঝোঁপজঙ্গলে ঠাঁসা। তবে বর্তমানে দেখা যায় সেখানে ঝোঁপজঙ্গল পরিস্কার করা হয়েছে। পার্কের প্রবেশ পথটির প্রধান গেটটি সারাক্ষণ খোলা থাকার কারনে যে কেউ অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে সেখানে। পার্কটির পরিত্যক্ত ভবনের ছাদে দেখা যায় স্থানীয় উঠতি বয়সী কয়েকজন যুবককে । এসময় তারা সেখানে বসে সিগারেট টানছিলেন।

পার্কের প্রবেশ পথের কাছে কন্সট্রাকশনের কাজে যুক্ত কয়েকজন রাজমিস্ত্রির সাথে দেখা হলে কথা হয় তাদের সাথে। এসময় কাসেম নামে এক শ্রমিক জানায় , দিনের বেলা বেশ কয়েকজন স্থানীয় যুবক পার্কের ভিতরের ভবনের ছাদে বসে নিয়মিত আড্ডা দেয় এবং মাদক সেবন করে। মাঝে মধ্যে স্কুল-কলেজের প্রেমিক জুটি আসলে ছাদে থাকা যুবকরা ফাঁদে ফেলে ব্যøাকমেইল করে এদের সবকিছু কেড়ে নেয়। এমন অবস্থায় সচেতন অভিবাবক বা শিশু-কিশোররা ভয়ে ঐ পার্কে এখন আর আগের মতো যেতে সাহস পাননা।

এবিষয়ে সরেজমিন বক্তব্য জানতে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিনের সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেখা করতে গেলেও মিটিংয়ে থাকায় তাৎক্ষণিক বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে পরবর্তীতে তার ব্যহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি যতদুর জানি পার্কটি সংস্কারের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে, তবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারবো বিস্তারিত।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০)