স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের সর্বোচ্চ নম্বর/সিজিপিএ প্রাপ্তদের হাতে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমাদের মঞ্জুরী কমিশন যেন খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।’

‘বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত একটা অভিন্ন নীতিমালা করা। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কতো ছাত্রছাত্রী থাকবে সেটাও সীমিত করে দেওয়া। কারণ ঢালাওভাবে ভর্তি করলে পড়াশোনা কীভাবে ঠিকমতো হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যাতে মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। আর এখন এটা খুব কঠিন কাজ না।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পরিধি আরও বৃদ্ধি করা, লোকবল বৃদ্ধি করা, দক্ষতা বৃদ্ধি করা, আমরা যে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি সেটা যেন ভালোভাবে নজরদারি করতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে এটাকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং নেবো।’

সবকিছুকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে দিয়েছি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে। যেটা এক সময় ছিল না। যে যার মতো একখানা বিশ্ববিদ্যালয় করে, এক বিল্ডিংয়ে দেখা যায় তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় কি শিক্ষা দেয় আমি জানি। আমার কাছে অবাক লাগতো সে সময়। এখন একটা ডিসিপ্লিনে নিয়ে আসার চেষ্টা নিয়েছি।’

শিক্ষার সম্প্রসারণ ও উন্নত শিক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার সব করবে জানিয়ে শিক্ষাবিদদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিন্তা করে দেখেন শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য এবং শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার জন্য কী কী প্রয়োজন। যা প্রয়োজন আমরা তাই করবো এবং সেটাই আমাদের নীতি।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার প্রসারটা আমরা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। সেভাবে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছি। পড়াশোনাকে বহুমুখীকরণ করে, যাতে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা আমরা বলছি। এখান থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠছে এবং সেটা আরও বিকশিত হবে।’

গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা লাভ করা যায় না। যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।’

এসএসসি পর্যন্ত বিভাগ থাকার প্রয়োজন নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্লাস নাইন থেকে কোন বিভাগে যাবে সেটা ভাগ করে দেওয়া হয়। আমার মনে হয় এই ভাগটা থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত সব সাবজেক্টেই তারা পড়তে পারে। এসএসসি’র পরে গিয়ে যদি বিভক্তি হয় সেটা ভালো। তাহলে অন্তত মেধা বিকাশের একটা সুযোগ পায়।’

বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনতো সব বিষয়ই বিজ্ঞানভিত্তিক। বিজ্ঞানের বাইরে কিছু নেই।’

অনুষ্ঠানে দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের সর্বোচ্চ নম্বর/সিজিপিএ প্রাপ্ত ১৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে স্বর্ণপদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মধ্যে ৮৪ জন ছাত্র এবং ছাত্রী রয়েছে ৮৮ জন। ২০১৭ সালে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ পান ১৬৩ জন শিক্ষার্থী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজ টেকনোলজি’র শিক্ষার্থী মো. মোবারক হোসেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজের শারমিন সুলতানা।

মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০)