পাবনা প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙিয়ে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা, কাটাজোলা খ্রিস্টানপল্লীর প্রভাবশালী নেতা সুবোল মন্ডলের চাঁদাবাজি, অন্যের জমি জাল দলিল করা, অবৈধ পন্থায় অন্যের জমি দখলের চেষ্টাসহ নানা অনিয়ম, অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন একই সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা।

একাধিক লিখিত অভিযোগে জানা যায়, জেলার চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা কাটাজোলার খ্রিস্টানপল্লীর সমরেন্দ্র মিত্র গং এর ১.৩২ একর জমি অবৈধ পন্থায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিজের দাবী করেন খ্রিস্টান নেতা সুবোল মন্ডল। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনিক পদক্ষেপের কারণে সে এগুতে পারেনি।

পরবর্তীতে জমিটি ফৈলজানা ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের দাবী করে আইনী প্রক্রিয়াতে দখল নিতে গিয়েও তিনি ব্যর্থ হয়ে পরে মামলার পথ বেছে নেন ও অত্যাচার শুরু করেন। নানা শালিসী বৈঠকের এক পর্যায়ে সুবোল মন্ডল নিজ সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সাইনবোর্ড লাগান ও ভেঙ্গে ফেলে উল্টো প্রকৃত জমির মালিকসহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। একই সাথে তার লোকজন জমির প্রকৃত মালিকদের মারধরও করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, সুবোল মন্ডল জমিটি দখল করতে না পেরে ওই জমির উপর দিয়ে স্থানীয় সাংসদের নিকট থেকে বরাদ্দ নিয়ে এসে ৪০/৫০ ফিট লম্বা ও ৮/১০ ফিট চওড়া রাস্তা নির্মাণ করেন গীর্জায় প্রবেশ পথে। লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, অবৈধ ভাবে জমির উপর লাগানো সাইনবোর্ড চুরি সংক্রান্ত ওই পল্লীর হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ১৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

এছাড়াও প্রকৃত জমির মালিকের বিরুদ্ধে মোট ৮ টি মামলা দায়ের করেছেন সুবোল মন্ডল। পাশাপাশি খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ ওই পল্লীর হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনকে প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি ও মামলা দেয়ার হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। পল্লীর যুবতি ও গৃহবধূদের নানা সময়ে অসামাজিক প্রস্তাব ও উত্যক্ত করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকি ধামকি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ এ পল্লীর মানুষ।

স্থানীয়রা বলছেন, সুবোল মন্ডল এলাকায় চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও অবৈধ ভাবে জমি দখলের কারণে গণধোলাইয়ের শিকার হন। সে সময়ের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিস্টানপল্লীতে হামলার ঘটনায় ফৈলজানাতে ছুঁটে আসেন। সে থেকেই জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন ও জনগণ তাকে কিছু বলতে সাহস পান না। তিনি এলাকায় যত অন্যায় করুক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙিয়ে চলার কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও খ্রিস্টানপল্লীর মানুষ তেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। নারী নির্যাতন মামলা দায়েরের পরও সুবোল মন্ডলের কাছে ম্যানেজ হয়ে পুলিশও সঠিক বিচার করেনি বলে অভিযোগ খ্রিস্টান পল্লীর মানুষের।

নির্যাতন ও হয়রানির শিকার একাধিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা বলছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবরে, পাবনার জনসভায় এবং আমেরিকাতে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার ফৈলজানা খ্রিস্টানপল্লীর সুবোল মন্ডলের খোঁজ খবর নেওয়ার পর থেকে সুবোল মন্ডলের দাপট কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। তিনি এলাকায় যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন। কেউ ভয়ে কিছু বলার বা করার সাহস পান না।

স্থানীয় একাধিক জনের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ঘনজনবসতিপূর্ণ স্থানে কোন ধরণের শিল্প কলকারখানা স্থাপন করা নিষেধ। অথচ তিনি ক্ষমতার দাপটে একটি ভারী মিল স্থাপন করায় মেশিন ও বয়লারের শব্দে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে গোপনে নানা চাপ দেখিয়ে চাঁদা দাবীসহ টাকা ধার নিয়েও তাদের টাকা পরিশোধ করেননি। উল্টো তাদের নানা সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করেন।

ফৈলজানা খ্রিস্টান পল্লীর মিসেস দিপালী মিত্র বলেন, আমার ভাইদের জমি নিয়ে কোর্টে মামলা বিচারাধীন যা সুবোল মন্ডল মিশনের নাম ও নিজেকে পক্ষ করে দিয়েছে যেটি তাকে করতে মিশন নিষেধ করেছেন। সুবোল মন্ডল ও তার লোকজন জমির উপর থেকে আমার পরিবারের সাইন বোর্ড ভাঙিতে না পেরে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তার বিরুদ্ধে আমি চাটমোহর থানাতে জিডি করেছি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ ফেলোশীপ (বিবিসিএফ) এর সাধারণ সম্পাদক রেভা. লিয়র.পি. সরকার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, এবিএমএস কর্তৃক দি ইউনাইটেড ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ ট্রাষ্ট এসোসিয়েশনকে দলিল মূলে যতটুকু সম্পত্তি (জমি) প্রদান করা হয়েছে, তার বাইরে ট্রাস্ট বা বিবিসিএফ এর কিছু করণীয় বা অধিকার নেই। অর্থাৎ ফৈলজানাস্থ বিরোধপূর্ণ সম্পত্তি বিবিসিএফ বা ট্রাস্টের নয় বাংলাদেশে এবিবিসিএফ এর ২০০ উপরে মন্ডলী রয়েছে যার সমস্ত সম্পত্তি ট্রাষ্টের নামে থাকে এবং ফৈলজানা কাটাজোলা তাদেরই একটি ক্ষুদ্র মন্ডলী। এদের আছে শুধু ৩৭ শতক জমি। এর বাইরে ফৈলজানায় কোন মিশনের জমি নাই।

স্থানীয় বাসিন্দা হোমিও চিকিৎসক সুধীর বৈদ্য জানান, আশির দশকে সুবোল মন্ডল হঠাৎ নিজের দেশ বাড়ী ঘর ছেড়ে এ এলাকায় এসে হিন্দু থেকে খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণ করেন। এরপর থেকেই ফৈলজানা খ্রিস্টানপল্লীর ৩০০ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দূর্বিসহ যন্ত্রণা। এমন কোন অপকর্ম নেই যেটা এই সুবোল মন্ডল ও তার অনুসারীরা করেন না।

সাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সুবোল মন্ডলের সাথে ছিলাম। কিন্তু তার কর্মকান্ডগুলো বিতর্কিত হওয়ায় তার কাছ থেকে দুরেই অবস্থান নিয়েছি।

সাম আরও বলেন, যে জমি ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি। সেটা নিজে দখল নিতে পারেনি। পরে মিশনের দাবী করে দখলের চেষ্টা করেছেন। অথচ ৩০০ ঘর খ্রিস্টান আছেন, তাদের কেউ ওই জমি মিশনের বলে দাবী করেননি। এমন নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছেন সুবোল মন্ডল।

ফৈলজানা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার, স্থানীয় ব্যবসায়ী সুজাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুবোল মন্ডল মানুষটি জঘন্য খারাপ। তৎকালীন সময়ে ধীরেন বৈদ্য নামের এক খ্রিস্টান কানাডা হাইকমিশনে ছিলেন। তার অনুরোধেই ব্যক্তিগত বিরোধের শিকার সুবোল মন্ডলের খোঁজ খবর নিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৈলজানাতে এসেছিলেন। সেই থেকেই দাপটের সূত্রপাত ঘটে সুবোল মন্ডলের। জমি দখল, চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, বাপ বেটার সাথে প্রতারণা, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, হামলা ও ভয়ভীতি এমন কোন খারাপ কাজ নেই যা সুবোল মন্ডল করেননি।

সুজাউদ্দিন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাড়িতে আসার কারণেই সুবোল মন্ডল প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে একের পর এক অন্যায় কাজ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, শুধু পল্লীর মানুষের সাথেই সুবোল মন্ডল অন্যায় করেননি। নিজ পুত্রের সাথেও প্রতারণা করেছেন। তার শ্যালোকের সাথে করে শিল্পকারখানা স্থাপন করে শ্যালকের সাথেও বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন। ওই কারখানায় চাকুরি দেওয়ার নামে অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে টাকা ও চাকুরি কোনটাই দেননি।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফৈলজানা খ্রিস্টান নেতা সুবোল মন্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা দলীয় নাম ভাঙিয়ে কোন অনিয়ম, অন্যায় বা যে কোন ধরণের খারাপ কাজ করলে অবশ্যই আমার শাস্তি হওয়া উচিত। আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা একটাও সঠিক নয়। আমার পরিচিতি ও সুনামে একটি পক্ষ মেনে নিতে না পেরেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্ত করছে।

এদিকে স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ খ্রিস্টানপল্লীর মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ সুবোল মন্ডলের নানা মুখি অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে পরিত্রাণ পেতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা কামণা করেছেন।

(পিএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০)