স্পোর্টস ডেস্ক : চলতি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নিগার সুলতানা জ্যোতি। ভারতের ১৪২ রানের জবাবে তিনি খেলেছিলেন ২৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। যতক্ষণ জ্যোতি উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণ জয়ের আশাও ছিলো বাংলাদেশের।

শেষপর্যন্ত ম্যাচটি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে সাহসী ব্যাটিংয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান জ্যোতি। শুধু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতেই নয়, জ্যোতি মূলত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেই বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসের মালিক।

গতবছরের ডিসেম্বরে নেপালে হওয়া সাউথ এশিয়ান গেমসে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ১১৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন জ্যোতি। তিন নম্বরে নেমে ৬৫ বলে ১৪ চার ও ৩ ছয়ের মারে সাজিয়েছিলেন নিজের ইনিংস। সে ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন ফারজানা হকও। তার ব্যাট থেকে আসে ৫৩ বলে ১১০ রান।

আজ (বৃহস্পতিবার) অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচের খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচটি আবার উইকেটরক্ষক জ্যোতির ৫০ তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এ ম্যাচে নামার আগে টপ-মিডল অর্ডারে নেমে সাহসী ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত জ্যোতি শুনিয়েছেন নিজের ক্রিকেটে আসার গল্প।

আইসিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মাত্র দুই বছর বয়সেই ক্রিকেটের হাতে-খড়ি তার। ভাইদের উৎসাহেই এসেছেন পেশাদার ক্রিকেটে। তার সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন দলের অন্যতম দুই তারকা জাহানারা আলম এবং রোমানা আহমেদও।

ভিডিও সাক্ষাৎকারে জ্যোতি বলেন, ‘আসলে যেহেতু আমি উইকেটরক্ষক, তাই মাঠ ও মাঠের বাইরে আমি বেশ দুষ্টু। কেননা (উইকেটরক্ষক হিসেবে) পুরোটা সময় মেয়েদের উজ্জীবিত রাখার দায়িত্বটা তো আমারই। আর মানুষ হিসেবে বলতে পারেন, আমি খুবই উপকারী একজন মানুষ। যে কারো যেকোনো দরকারে আমার কাছে আসলে, সমাধান করে দেয়ার চেষ্টা করি।’

নিজের ক্রিকেট জীবন শুরুর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছি যখন আমার বয়স ২। আমি আমার ভাইদের সঙ্গে খেলতাম। আমার ভাই আমাকে সবসময় বলতো যে, তোমাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে হবে। সেভাবেই নিজেকে তৈরি করো। এভাবেই আমার ক্রিকেটে আসা, এখন ক্রিকেটই আমার ধ্যানজ্ঞান।’

জ্যোতি আরও বলেন, ‘এটা আমার তৃতীয় বিশ্বকাপ। আমি সবসময় স্বপ্ন দেখতাম যে একদিন আমি আমার দেশের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলতে নামবো। এখন সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এ দিনটার জন্য আমি অনেক অপেক্ষা করেছি।’

২০১৮ সালের নারী এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ দল। সে দলের গর্বিত সদস্য ছিলেন জ্যোতি। সাফল্যমণ্ডিত সে টুর্নামেন্টের স্মৃতি হাতড়ে জ্যোতি বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা যখন এশিয়া কাপ জিতলাম, এরপর থেকে সবকিছু বদলে গিয়েছে। এখন মেয়েরাও ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নিতে শুরু করেছে। তাই আমরা যদি এবারের বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে পারি, তাহলে দেশে মেয়েদের ক্রিকেটে এর দারুণ প্রভাব পড়বে।’

এসময় জ্যোতির ব্যাপারে নিজেদের মূল্যায়ন জানান জাহানারা এবং রোমানা। জাহানারা বলেন, ‘আমাদের দলে এমন ২-৩ জন খেলোয়াড় আছে যারা সবসময় পরিবেশটাকে হাসি-খুশি রাখতে পারে। এদের মধ্যে জ্যতি অন্যতম। সে যেকোনোসময় যে কাউকে খুশি করে ফেলতে পারে। খেলোয়াড় হিসেবেও দারুণ। ভবিষ্যতে বড় তারকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জ্যোতির মধ্যে।’

জ্যোতির ব্যাপারে রোমানা বলেন, ‘জ্যোতি খুবই বন্ধুবৎসল একজন মানুষ। আসলে সে পুরোপুরি পাগলাটে। সবসময় আমাদের সঙ্গে মজা করে, হাসিখুশি থাকে। সবাইকে অনুপ্রাণিত করার গুণ রয়েছে ওর মাঝে।’

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০)