আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের গৌরনদী উপজেলা খাদ্য গুদামে আমন ধান সংগ্রহ অভিযান নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে ওসিএলএসডি  (খাদ্য গুদাম পরিদর্শক) সুভাষ চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও অতি গোপনে স্থানীয় সরকারি দলের ৩/৪ নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ধান কিনে খাদ্য গুদাম ভরছেন তিনি। এরই মধ্যে গৌরনদী খাদ্য গুদামে আমন ধানের পরিবর্তে কারসাজির মাধ্যমে ২ মেট্রিক টন বোরো ধান প্রবেশ করানোর অভিযোগ উঠেছে।সাংবাদিকরা ছবি তোলার কারণে আমন ধানের পরিবর্তে ৩ মেঃটন বোরো ধান গোডাউনে ঢুকানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। 

কৃষকরা অভিযোগ করেছে, নানা অজুহাতে ধান নিচ্ছে না গৌরনদী খাদ্য গুদামে। এমনকি গোপনে অবৈধ পথে গোডাউনে ধান ভরারও কাজ চলছে। ২ মেট্রিক টন বোরো ধান গৌরনদী খাদ্য গুদামে ঢুকানো হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ছাত্রলীগের ৩/৪ নেতাকর্মীসহ খাদ্য গুদামের ষ্টাফরা। এমনকি মানসম্মত ধান না হওয়ার অজুহাতেও কৃষকদের কাছ থেকে ধান নেয়া হচ্ছে না।

এ অবস্থায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে হাট-বাজার গুলোতে প্রতি মন ধান ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। এছাড়া উপজেলার তালিকাভূক্ত অর্ধশতাধিক কৃষকের আমন ধান না থাকায় একটি দালাল চক্র আমন ধান খরিদ করে গোডাউনে জমা দিয়েছে। এতে প্রকৃত কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, চলতি মৌসুমে আমন ধান সংগ্রহ অভিযান শুক্র হলে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও মাগুরা গ্রামের শাহিন খান, ছাত্রলীগ কর্মী বেল্লাল হাওলাদার প্রায় ৮ মেঃটন বোরো ধান খরিদ করে খাদ্য গুদামের সরবরাহকৃত খাদ্য অধিদপ্তরের সীলযুক্ত দেড়শতাধিক নতুন বস্তা ভর্তি করেন। এরপর ওই বস্তাগুলো দোনারকান্দি গ্রামের প্রতাপ সরকারের ঘরে ও তার বাড়ির কাছে রাস্তার ওপর মজুদ করেছিলেন। গৌরনদী ওসিএলএসডি’র যোগসাজশে সম্প্রতি ২ মেঃটন বোরো ধান খাদ্য গুদামে ঢুকানোর অভিযোগ করেছেন তারা।

নসিমনের চালক রাসেল সরদার, রাশেদ হাওলাদার জানান, মাগুরা গ্রামের শাহিন খান দোনারকান্দি গ্রামের প্রতাপ সরকারের বাড়ি থেকে বুধবার বেলা ১১টার দিকে তাদের নসিমনে সরকারি শীলযুক্ত নতুন ৭৫টি বস্তায় ইরি ধান ভর্তি করে গৌরনদী খাদ্য গুদামে পৌছে দেয়ার কথা বলেন। তারা ধান ভর্তি নসিমন ২টি নিয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে গৌডাউনের ভেতর প্রবেশ করেন। লেবাররা নসিমন থেকে ধানের বস্তা নামানোর প্রস্তুতি কালে সাংবাদিকরা নসিমন ভর্তি ধানের বস্তার ছবি তোলেন। ছবি তোলার কারণে গোডাউনের স্যারের নির্দেশে লেবাররা ধানের বস্তা নসিমন থেকে না নামিয়ে ফিরিয়ে দেয়। তখন বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে এলাকায় ফিরে যাওয়ার পথিমধ্যে দুপুর পৌণে ১টার দিকে গৌরনদী হাইওয়ে থানার কাছে পৌছলে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ তাদের নসিমন ২টি আটক করেন।

খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহিন খান বলেন, গৌরনদী খাদ্য গুদাম থেকে বেল্লাল হাওলাদার সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তরের সীলযুক্ত খালি বস্তা এনেছিলো। আমরা ওই বস্তায় ৩ মেঃটন বোরো ধান ভর্তি করে কুদ্দুস মাতুব্বর, বাদল সেরনিয়াবাতের নামের তালিকার ধান খাদ্য গুদামে দিতে গিয়েছিলাম।

গৌরনদী খাদ্য গুদাম পরিদর্শক (ওসিএলএসডি) সুভাষ চন্দ্র পাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নসিমনে বোরো ধান ভর্তি ওই বস্তাগুলো আমরা সরবরাহ করি নাই। ওই কৃষকরা সরকারি সীলযুক্ত বস্তা খোলা বাজার থেকে খরিদ করে বোরো ধান ভর্তি করে গোডাউনে দেয়ার চেষ্টা করেছিলন। বোরো ধান গুদামজাত করার প্রশ্নই উঠে না। একটি কুচক্রি মহল আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সাংবাদিকদের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য সরবরাহ করেছেন। গৌরনদী খাদ্য গুদামে ৮৪৭ মেঃটন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হলেও ৭ শ মেঃটনের বেশী ধান সংগ্রহ করা গেছে।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান জানান, কিছু কৃষক আমন ধানের পরিবর্তে বোরো ধান গোডাউনে দিতে চেষ্টা করেন। তবে ওসিএলএসডি ধান দেখে আমন ধান হলে গুণগত মান ভাল হলে তারপর গুদামজাত করেন। এক কৃষক বুধবার দুপুরে ২টি নসিমন ভর্তি করে বোরো ধান দিতে চেষ্টা করছিলো। তা ফেরত দেয়া হয়েছে। বোরো ধান গুদামজাতের কোন লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ইউএনও জানান।

গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি মুজাহিদুল ইসলাম জানান, খাদ্য অধিদপ্তরের সীলযুক্ত নতুন ৭৫টি বস্তা ভর্তি বোরো ধানসহ মহাসড়কে চলাচলকারী অবৈধ ২টি নসিমন আটক করা হয়েছে

(টিবি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০)