রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার বাগানে বাগানে আম গাছ ভরে গেছে মুকুলে। মুকুলের সুমিষ্ট গন্ধে মৌমাছি ডালে ডালে গুঞ্জন করছে। মাঘ মাসের প্রথম থেকেই আম গাছের মুকুল পরিচর্যায় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করেছন।

সাতক্ষীরা সদরের মথুরাপুরের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, তার ১১ বিঘা জমিতে শতাধিক আম গাছ রয়েছে। এবার মাঘ মাসের প্রথম থেকেই আম গাছে মুকুল ধরা শুরু করে। ফাল্গুন মাসের কয়েকদিন কেটে গেলেও অনেক গাছে এখনো ভালভাবে মুকুল অসেনি। তবে গরম ডাকার আগেই অধিকাংশ গাছে মুকুল ভরে যাবে বলে তিনি আশাবাদী। এবার পর্যাপ্ত কুয়াশা না হওয়ায় মুকুল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে কাঙ্খিত আমের ফলনের লক্ষ্যে শুরু থেকেই গাছ ও মুকুলের পরিচর্যা করছেন তিনি। তার বাগানে ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি জাতের আম গাছ রয়েছে।

তালা উপজেলার গোপালপুরের সুমন রায় গণেশ বলেন, এখন আর কপোতাক্ষের দু’তীর ছাপিয়ে পড়া পানিতে এলাকা প্লাবিত হয় না। ফলে সবজি চাষের পাশাপাশি আম গাছের ফলনও ভাল হয়। এবার তাদের ১৩টি আমগাছে ভাল মুকুল ধরেছে। মুকুল যাতে ঝরে না যায় সেজন্য ইতিমধ্যেই তিন থেকে চার বার গাছ ¯েপ্র করেছেন। গাছে যে পরিমান মুকুল ধরেছে তাতে মৌমাছি বসায় তাড়াতাড়ি গুটি ধরবে। গুটি যাতে ঝরে না যায় সে জন্য গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার পাশপাশি স্প্রে করা হচ্ছে হর্মন ও ডিডিটি। তার বাগানে হিম সাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ আম গাছ রয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে গত বারের তুলনায় ফলন বেশী হবে।

গাছে ভাল মুকুল ধরার কথা বললেও কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও সাতক্ষীরা সদরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আম চাষীরা জানালেন ভিন্ন কথা । তারা বলেন, অন্য বছরে এই সময়ে সারা গাছ মুকুলে মুকুলে ছেয়ে যায়। জলবায়ুর পরিবর্তণ জনিত কারণে যথা সময়ে বৃষ্টি না হওয়া ও শীত না পড়ায় এবার আমের ফলন কম হবে। তাছাড়া বিদেশে আম পাঠানোর নামে তারা যে প্রস্তুতি নেন বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটে না। ফলে কৃষি বিভাগের সুপারিশক্রমে অধিক খরচ করে বিদেশে আম পাঠাতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) উপপরিচালক অরবিন্দ কুমার বিশ্বাস বলেন, গত বছর জেলায় চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পাঁচ হাজার ২৯৯ টি আম বাগানে উৎপাদন হয় ৪০ হাজার মেট্রিক টন আম। এ জন্য অঅম চাষী ছিল ১৩ হাজার ১০০ জন। গত বছর ২৫০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এবার চার হাজার ২০০হেক্টর জমিতে আম চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশে আম পাঠানোর লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষন দেওয়া হবে। পোকা মাকড়ের আক্রমণ ও মুকুল ঝরা প্রতিরোধে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আম চাষে উৎসাহী করতে কৃষকদের বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হচ্ছে। যেসব গাছে এখনো আমের মুকুল আসেনি সেসব গাছে খুব শীঘ্রই মুকুল এসে যাবে।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০)