রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়ায় একটি পিচ ঢালাই পাকা সড়কে নেই কোনো ভাঙ্গাচোরা। সুন্দর ও সাবলিল এ সড়ক দিয়ে চলছে অসংখ্য যানবাহন। সেই পাকা সড়কের ওপর দেওয়া হচ্ছে পিচ ঢালাই। এতে স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, সরকারি অর্থ লুটপাট করতেই এটি করা হচ্ছে।

শনিবার দুপুরে সরেজমিনে নড়াইলের লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়কের মানিকগঞ্জ এলাকায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের।

নড়াইল সওজ সূত্র জানায়, লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়কের চাঁচই চৌরাস্তা থেকে মানিকগঞ্জ বাজার পর্যন্ত তিন হাজার ৬০০ মিটার (সড়ে তিন কিলোমিটার), শিয়রবর এলাকায় আট’শ মিটার ও কালিশংকপুর এলাকায় ১ হাজার ৩৫০ মিটার সংস্কার করতে প্রায় ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কালিশংকপুর এলাকায় কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে মানিকগঞ্জ এলাকার সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ।

মনিকগঞ্জ বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়ক এটি। চলাচল করছে ছোট-বড় অসংখ্য পণ্যবাহী যানবাহন ও যাত্রী। ওই পাকা ভালো সড়কের ওপর পাতলা করে পিচ ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। চলাচলের সুবিধার্থে সড়কটির পূর্ব পাশ দিয়ে ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। এরপর ঢালাই দেওয়া হবে পশ্চিম পাশে। পিচ ঢেলে রোলার দিয়ে ডলা হচ্ছে। সেখানে রনি সরদারসহ ১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কাজ দেখাশোনা করছেন ঠিকাদারের ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হাসান।

শ্রমিকেরা জানান, এই সড়ে তিন কিলোমিটার তথা তিন হাজার ৬০০ মিটারের মধ্যে মরিচপাশা এলাকায় প্রায় ৪০০ মিটার হবে গর্ত ও ভাঙ্গাচোরা। বাকি প্রায় ৩ হাজার ২০০ মিটার ভালো। ভাঙা অংশটির গর্ত ভরাট করে পিচ ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ভালো অংশের (৩২০০ মিটার) ওপরও পিচ ঢালাই (সিল কোড) দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারের ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হাসান বলেন,‘সওজ আমাদের এ কাজ করতে দিয়েছে, তাই আমরা করছি। এসটিমেটতো (প্রকল্প) সওজ করেছে।’

স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়কটি ছিল এলজিইডির। গত বছর ১২ জুন লোহাগড়ার কালনা থেকে লাহুড়িয়া হয়ে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত সড়কটি সওজ বিভাগে হস্তান্তর হয়। তখন থেকে সড়কটি সওজের। এর এক বছর আগে এলজিইডি ওই সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় সংস্কার করে। এর আগে প্রায় পাঁচ বছর ধরে সড়কটির বেহাল দশা ছিল।

মানিকগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, সড়কটির ভালো অবস্থা ছিল। এখন ভালো সড়কের ওপর পাতলা করে কোনোরকমের পিচ ঢালাই করা হচ্ছে। এ সড়কটিতে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। ওই পাতলা পিচ জায়গায় জায়গায় উঠে যাবে। তখন সেখানে পানি জমবে। এতে নিচের পুরোনো পিচ নষ্ট হয়ে সড়ক বেহাল হবে। অর্থাৎ ভালো সড়কটিতে টাকা ব্যয় করে নষ্ট করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অর্থ লুটপাট করতেই এটি করা হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘কাজ যারা করছেন তাদের কাছে বারবার জানতে চেয়েছি যে, কত খারাপ সড়ক পড়ে আছে, সেখানে কাজ না করে ভালো সড়কে কাজ কেন করছেন। এর উত্তর পাইনি।’

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, ওই সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম ভালো সড়কের ওপর পিচ দেওয়া হচ্ছে। এখানে কাজ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। অথচ এলাকায় কত ভাঙ্গাচোরা সড়ক রয়েছে। এ বিষয় নিয়ে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলবো বলে তিনি জানান।’

জানতে চাইলে নড়াইল সওজের ওই সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন মুঠোফোনে বলেন,‘ওই সড়কের কাজের এসটিমেটটি (প্রকল্প) আমিই করেছি। মরিচপাশা এলাকায় গর্ত ও ভাঙ্গাচোরা ছিল। মানিকগঞ্জ বাজার এলাকায় ভালো ছিল।’

ভালো অংশের জন্য কেন সংস্কার প্রকল্প তৈরি করলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান হোসেন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেন, ‘অফিসে আসেন, তখন কথা বলব।’

নড়াইল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরিফ বলেন, ‘পাকা সড়কের ওপর ৭-১০ মিলিমিটার পিচ ঢালাই (সিল কোড) দেওয়া হচ্ছে। খালি চোখে হয়তো সড়কটি ভালো মনে হচ্ছে। সড়ক রক্ষানাবেক্ষণ করতে সার্ভে করে এটি করা হচ্ছে।’

নড়াইল জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জনগণের টাকায় সরকারের রাজস্ব তহবিল হয়। অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে সেই টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। এটি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা উচিৎ।’

(আরএম/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০)