শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গার্মেন্টকর্মী এক গৃহবধুকে ঢাকার মহাখালীতে বাসে আটকে ধর্ষণের ঘটনায় শেরপুরের সর্বত্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে। নারী-নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে ধর্ষক বাস চালককে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

এদিকে, ওই ধর্ষনের ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বনানী থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে ধর্ষক বাস চালক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি দায়ের করেন।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বারমারী বাজার থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকায় চলাচলকারী লিজা-অনিক সার্ভিসের রাতের বাসে ঢাকায় কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন নালিতাবাড়ীর বুরুঙ্গা গ্রামের এক সন্তানের জননী ওই গার্মেন্ট কর্মী। গাড়িটি বুধবার ভোরে ঢাকার মহাখালি পৌঁছানোর পর যাত্রীরা সবাই নেমে গেলেও ওই গার্মেন্ট কর্মীকে নিরাপত্তার কথা বলে নামতে দেয়নি চালক রফিকুল ইসলাম। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা স্টাফদের কৌশলে গাড়ি থেকে নামিয়ে জোরপূর্বক তাকে বাসের ভেতরেই ধর্ষণ করে। ঘটনাটি মোবাইল ফোনে ওই গার্মেন্ট কর্মী তার স্বামীকে অবহিত করে। এনিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এদিকে, ধর্ষক চালক রফিকুল ইসলাম বুধবার রাতে ওই গাড়িতে না গিয়ে কৌশলে বদলী আরেক চালক ও স্টাফ দিয়ে গাড়িকে বারমারী বাজার থেকে ট্রিপ আনতে পাঠিয়ে পালিয়ে যায়। বুধবার রাতে গাড়িটি বারমারী বাজারে গেলে ওই গাড়িতে থাকা চালক ও হেলপারদের বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী মারধর করে আটকে রাখে। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী শহরে আনা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে মালিক-শ্রমিক সমিতি ও আওয়ামী লীগ নেতৃব্ন্দ দেনদরবার শেষে রাতেই ধর্ষিতা ও তার স্বজনেরা ঢাকা উদ্দেশ্যে চলে যাায়। পরে আজ শুক্রবার দুপুরে ভিকটিম নিজেই বাদী হয়ে ধর্ষক চালক রফিকুলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা দায়ের করে।

রাজধানীর বনানী থানার ওসি ভুঁইয়া মাহবুব হাসান মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মহাখালীতে গার্মেন্টস কর্মীকে বাসে আটকে ধর্ষণের ঘটনায় বাস চালক রফিকুল ইলসামের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রেকডৃ করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা জোবাইদা খাতুন বলেন, এটি একটি লোমহর্ষক ঘটনা। তিনি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে ধর্ষককে গ্রেপ্তার এবং এবং আইনের আওতায় আনার দাবী জানান। অন্যথায় এ ঘটনায় মানববন্ধন সহ নানা আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারন করেন।

শেরপুর জেলা মহিলা পরিষদ সভানেত্রী জয়শ্রী দাস লক্ষ্মী এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এর মধ্য দিয়ে নারীর নিরপত্তাহীনতার বিষয়টি আবারো সামনে চলে এসেছে। আমরা অবিলম্বে ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে আমরা কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামবো।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ দে কৃষ্ণ এ ঘটনার নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এটা কেবল অপরাধই নয়, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত একটি ঘটনা। রাষ্ট্রকে এর সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার অবশ্যই করতে হবে।


(এইচবি/এটিআর/আগস্ট ০৪, ২০১৪)