রাণীশংকৈল প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা জুড়ে গবাদিপশুর খুরা, তড়কা ও পিপিআর রোগে ১ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১৫টি গাবিদপশু (গরু-৫টি-ছাগল-১০টি) মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ধরনের রোগের প্রকৌপ চরম পরিমাণে ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলা জুড়ে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিনই খবর আসছে গবাদিপশুর এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার। এ নিয়ে দুশচিন্তায় পড়েছে গবাদিপশু পালনকারীরা। এ রোগ প্রতিকারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্তৃপক্ষের তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এদিকে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস বলছে, আমাদের জনবল সংকট ও চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এই পরিস্থিতি।

তবে পরিস্থিতি যাই হোক কি পরিমাণ গরু ছাগল এ ধরনের রোগে মারা যাচ্ছে তার কোন পরিসংখ্যান নেই প্রাণি সম্পদ দপ্তরে বলে নিশ্চিত করেন উপ-সহকারী প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আমজাদ আলী।
এ রোগ প্রতিকারে সরকারীভাবে ভ্যাকসিন শুধুমাত্র উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরেই বিতরণ করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে এ ক্ষেত্রেও চরম বাণিজ্য করে থাকে ভ্যাকসিন প্রদান কর্মিরা।

উপজেলা ও পৌর শহর জুড়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে, পাড়া মহল্লা জুড়ে গরু ছাগলের ক্ষুরাই তড়কা ও পিপিআর রোগের প্রকৌপ বেড়েছে।

সম্প্রতি মহলবাড়ী গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে গরু পালন কারী সাদেকুল ইসলামের ১টি পঞ্চাশ হাজার টাকা মূল্যর ষাড় গরু তড়কা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

একইভাবে রাউতনগর গ্রামের সফির ১টি গাভী গরু রাতোর গ্রামের রাজুর ১টি ষাড় গরু নন্দুয়ার গ্রামের সফিউল্লা ও আনিসের ২টি ছোট গাভী গরু ক্ষুরাই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

একইভাবে সন্ধারই সাতঘরিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আনিসুর রহমানের মঙ্গলবার ২টি খাসি সন্ধারই খুটিয়াটলির নাজমুলের ২টি চেকপোষ্ট এলাকার হবিবরের ৩টি কলিগাঁও গ্রামের হোসেনের ১টি ও উত্তরগাঁও গ্রামের দুলালের ২টি ছাগল পিপি আর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে নিশ্চিত করেছে ভুক্তভোগীরা।

উপজেলা প্রাণী সম্পদের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী উপজেলায় গরু রয়েছে এক লাখ পনের হাজার তিনশত পঞ্চাশটি ছাগল এক লাখ উনিশ হাজার সাতশত পঞ্চাশটি। মহিষ ভেড়া রয়েছে চার হাজার একশত একাত্তরটি। হাঁস রয়েছে চার লাখ তেতাল্লিশ হাজার ছয়শত পঞ্চাশটি মুরগী রয়েছে পচানব্বই হাজার ছয়শত তিরাশিটি। যদিও জরিপ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে উপজেলাবাসীর?

উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর বলছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে গরু’র ৫টি ভয়ানক রোগ (তড়কা,ক্ষুরা, বাদলা, গলাফুলা, লাম্পস্কিন) প্রতিরোধ মুলক ভ্যাকসিন চাহিদা ছিলো পয়তাল্লিশ হাজার ডোজ। পাওয়া গেছে তেইশ হাজার তিনশত বিশ ডোজ। এবং ছাগলের পিপি আর রোগের চাহিদা অনুযায়ী বার হাজার পাচঁশত ডোজ পাওয়া গেছে। একইভাবে হাস-মুরগীর বিভিন্ন ভ্যাকসিনের টার্গেট তিন লাখ পচাত্তর হাজার দেওয়া হলেও পাওয়া যায় দুই লাখ আটাশি হাজার আটশত ডোজ।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ বলছে আমাদের দপ্তরে মোট ১১টি পদের মধ্যে ৬টি পদে জনবল রয়েছে। বাকি ৫টি পদের মধ্যে উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তার ৪টিতে রয়েছে একজন এবং অফিস সহায়ক, ডেসার পদের ২টির কোনটিতেই জনবল নেই।

তবে প্রাপ্তির বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে গরুর ক্ষুরাসহ ৫টি ও ছাগলের পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ৮জন এল এসপি এবং ৮ জন টিকা প্রদানকর্মি প্রজেক্টের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। শুরু হলে কিছুটা নিস্তার পাওয়া যাবে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রায়হান আলীকে মুঠোফোনে এ বিষয়ে বক্তব্য চাইলে জেলা অফিসে মিটিংয়ে আছি পরে কথা হবে বলে ফোন রেখে দেন।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন না পাওয়া এবং জনবলের অভাবে এমনটি হচ্ছে।

(কেএস/এসপি/মার্চ ০৪, ২০২০)