আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরে সোমবার ভোর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২৫টি দোকান সম্পূর্ণ ও ১৫টি দোকান আংশিক ভস্মীভূত হয়েছে। তাতে অন্তত দুই কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে ৪০ জন ব্যবসায়ী পথে বসেছে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা পুড়ে যাওয়া বর্জ্য অপসারণ করে ঘর তুলতে গেলে মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের ঘর তুলতে নিষেধ করেছেন।

কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের জানান, নতুন করে কেউ ঘর তুললে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্থ ৪০ জন ব্যবসায়ী। মানবিক কারনে ঘর তুলতে অনুমতি দেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান ব্যবসায়ীরা।

ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা জানান, অগ্নিকান্ডে তারা সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। তাই নতুন করে বাঁচার জন্য পোড়া বর্জ্য অপসারন করে টিন কাঠের ঘর তুলতে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘর তুলতে বাধা প্রদান করেন। যদি কেউ নির্দেশ অমান্য করে ঘর তুলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের হুমকি দেন।

বাজারের পাইকারী যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী স্বাধীন খান (৪৫) বলেন, আগুন আমার সব কেড়ে নিয়েছ। চোখের সামনে প্রায় ৭০/৮০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আজ আমি নিঃস্ব। ঘুরে দাড়াতে নতুন করে ব্যবসা শুরু করার জন্য ঘর তুলতে গেলে প্রশাসন ঘর তুলতে দেননি। আব্দুর রাজ্জাক (৬০) বলেন, প্রায় ৪৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে আছি। আগুনে সব শেষ হয়ে গছে। নতুন করে ঘর তুলতে গেলে কর্মকর্তারা জানান কেউ ঘর তুলতে পারবে না। এখন কি করে বাচব। স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সহায়তা না দিয়ে উল্টো ঘর তুলতে বাধা দিচেছ।

ব্যবসায়ী সহিদুল ইসলাম খান (২৪) বলেন, আমার বাবা ও ভাই ৫০/৬০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করেছে। বর্তমানে আমিও প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। সোমবারের আগুনে সব শেষ হয়ে গেল। নতুন করে ঘর তোলার শুরু করলে মঙ্গলবার রাতে সহকারী কমিমনারসহ প্রশাসন কাজ বন্ধ করে দেন। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা ঘর তোলার অনুমতি দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ৫০/৬০ বছর ধরে ব্যবসা করে পোলাপানের লেখাপড়া খরচ যোগারসহ সংসার চালাচ্ছি। আগুনে সব শেষ করে দিল, এখন যদি দোকান ঘর তুলতে না দেন তাহলে কি করে বেঁচে থাকবো? মানবিক কারনে ঘর তুলতে দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান তারা।

কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছলেও পাম্প বিকল হওয়ার অজুহাতে দুই ঘন্টায় আগুন নেভাতে কাজ করতে পারেনি। দুই ঘন্টার আগুনে সব পুড়ে গেল আর আমরা ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখলাম।

পরে সকাল সাড়ে ৫টায় বরিশাল, উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। তৎক্ষনে ৪০ জন ব্যবসায়ীর সব শেষ হয়ে গেছে। সোমবার ভোর রাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড এলাকার মাকের্টে অগ্নিকান্ডে মেসার্স সোহেল টেডার্স, শহিদুল ষ্টোর, সরদার ইলেকট্রিক, স্বাধীন ষ্টোর, হাবিব ষ্টোর, জাহিদ ষ্টোর, জালাল ষ্টোর, আরিফ ষ্টোর, সারদিয়া টেলিকম, কমলেশ ষ্ট্যাডিও, জয়গুরু মিস্টান্ন ভান্ডার, জাকির ডিজিটাল প্রেসের শো-রুম, ফিরোজ মেকার, মনো হেয়ার কার্টিং, বি আলম ষ্টোর, নান্নু হোটেল, গৌরনদী অটোটেম্পু -মাহিদ্রা শ্রমিক কার্যালয়, নিজামের চায়ের দোকানসহ ২৫টি দোকান সম্পূর্ণ ও ১৫টি দোকান আংশিক ভস্মীভূত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ করে বলেন, গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের গাফলতির কারনে ৪০ দোকান ভস্মীভূত হয়ছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে গৌরনদী ফায়ার ষ্টেশনের ইনচার্জ আব্দুস ছালাম বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে ৩ মিনিটের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌছি কিন্তু সাধারন মানুষের বিশৃঙ্খলার কারণে পাম্প বিকল হয়ে পড়লে আগুন ছড়িয়ে পরে। পরে উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, বরিশাল কর্মীদের সহায়তায় আমরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিহা তানজিন বলেন, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ৪০টি দোকান ছিল বরিশাল জেলা পরিষদের সরকারি জমিতে। তাই জেলা পরিষদের নির্দেশে জমিতে ঘর তুলতে নিষেধ করা হয়েছে এবং ঘর তুলতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ নির্দেশ ছাড়া কাউকে ঘর তুরতে দেয়া হবে না।

(টিবি/এসপি/মার্চ ০৪, ২০২০)