প্রবীর সিকদার


টিস্যু বক্সে মুজিব শত বর্ষের লোগো ব্যবহার করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কেউ কেউ বলছেন, টিস্যু বক্সে মুজিব শত বর্ষের লোগো ব্যবহার করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হেয় করা হয়েছে! আমি বিস্মিত হই এটা ভেবে যে, এই টিস্যু বক্সগুলো বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি; শিক্ষা অধিদপ্তরের টেবিলে টেবিলে যে টিস্যু বক্স থাকবে, সেই টিস্যু বক্সে মুজিব শত বর্ষের লোগো ব্যবহার করা হলে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করার কী আছে! আমাদের বঙ্গবন্ধুর সম্মান কী এতো ঠুনকো যে, তাকে এতো সহজেই অসম্মানিত করা যায়! যারা বলছেন, টিস্যু বক্সে মুজিব শত বর্ষের লোগো থাকায় বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হয়েছে, আমি বলবো, তারাই বঙ্গবন্ধুকে অসম্মানিত করছেন। পৃথিবীর অনেক দেশে জাতীয় পতাকার আদলে জুতা ও অন্তর্বাস তৈরি করা হয়। তারা কী তাদের দেশের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করেন? অবশ্যই না। জাতীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকার আদল এক নয়! আমাদের ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়েরা লাল সবুজের জার্সি পরেন; সেটাও তো জাতীয় পতাকার আদল! আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ওই টিস্যু বক্সে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়নি, ব্যবহার করা হয়েছে মুজিব শত বর্ষের লোগো। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আর জন্ম শত বর্ষের লোগো কী এক হল? অবশ্যই এক নয়! আর টিস্যু বক্সে যদি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও থাকতো, তাতেও বঙ্গবন্ধু মুজিবকে অসম্মান করা হতো না বলেই আমি মনে করি।

বাংলাদেশের টাকা কিংবা মুদ্রায় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়। টাকা কিংবা মুদ্রায় বঙ্গবন্ধুর শৈল্পিক প্রতিকৃতি, ঠিক ঠিক বঙ্গবন্ধুর ছবি নয়, সেটা আমাদের অহংকারের পরিচিতি। যদি আমরা টিস্যু বক্সে মুজিব শত বর্ষের লোগো ব্যবহার করাকে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হয় বলে মনে করি, তবে তো টাকা কিংবা মুদ্রায় বঙ্গবন্ধুর শৈল্পিক প্রতিকৃতি ব্যবহার করাতেও বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হয়েছে! সেই বিবেচনায় আমাদের টাকা কিংবা মুদ্রার এমন অনেক ব্যবহার রয়েছে, যা রীতিমতো অসম্মানের পর্যায়েই পড়ে! এই টাকা ব্যবহার করে আমরা ঘুষ দেই, পতিতার দেহভোগের বিল পরিশোধ করি! অহরহ ব্যাংকগুলো টাকার উপরের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ছিদ্র করে, সীলমোহর দেয়, করে লেখালেখিও! এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিরাপদে টাকা বহনের জন্য আমরা অনেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত টাকা কিংবা টাকার বান্ডিল জাঙ্গিয়া কিংবা অন্তর্বাসের ভেতরে বহন করে থাকি। এতে কী বঙ্গবন্ধুর কোনও অসম্মান করা হয়? অবশ্যই নয়। তাহলে তো প্রশ্নের আকারে বলতেই হয়, টাকা কিংবা মুদ্রার ক্ষেত্রে যদি বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা না হয়, তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের টিস্যু বক্সে মুজিব শতবর্ষের লোগোতে কেন বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান জানানো হবে?