সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৫ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। হাসপাতালের নতুন ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সে সময়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এম.পি। তাড়াশবাসী প্রত্যাশা করেছিল হাসপাতালের এ উন্নয়নে চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ৩১ শয্যার লোকবল নিয়ে বর্তমানে খুড়িয়ে চলছে ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, চিকিৎসক সংকট, অপারেশান থিয়েটার বন্ধ এক্্ররে ও ইসিজি অচল, দুটি এ্যাস্বুলেন্সের মধ্যে একটি কোন রকমে সচল, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনও নেই। সেই সাথে বিভিন্ন অনিয়মের চিত্রতো রয়েছেই। যারফলে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে এ হাসপাতালে রোগী ভর্তিও হয় সীমিত

সূত্র জানায়, তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ডাক্তারের অনুমোদিত ১৭ টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে মাত্র ১১ জন। এর মধ্যে শূণ্য রয়েছে গাইনী, সার্জিক্যাল,এ্যানেসথেসিয়া, মেডিসিন, ডেন্টালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ।

এ ছাড়াও শূণ্য রয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি পদ। এসব সংকটের কারণে রোগীরা কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের প্রতিদিন এ অঞ্চলের রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এদেরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে পরেছেন নারী ও গর্ভবতী মায়েরা। ডেলিভারির জন্য অপারেশান থিয়েটার সচল না থাকায় এবং গাইনী,সার্জিক্যাল ও অবেদনবিদ না থাকায় এ সংকট আরো তীব্র হয়েছে।

এ ছাড়াও সিনিয়র স্টাফ নার্সের ১৮ টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ১১ জন, মিড ওয়াইফ তিনটি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ৩ জন, নার্সিং সুপারভাইজার একটি পদ শূণ্য, ক্যাশিয়ার পদ শূণ্য,অফিস সহকারী কাম কম্পিউটারের তিন টি পদের দুটি শূণ্য, পরিসংখ্যানবিদ একটি পদ শূণ্য, অফিস সহায়ক পাঁচটি পদের চারটি শূণ্য,সুইপার পাঁচ টি পদের মধ্যে চার টি শূণ্য, উপ সহকারী মেডিক্যাল অফিসার ১০ টি পদের মধ্যে একটি শূণ্য, পাঁচজন ডেপুটেশানে, ল্যাব দুই জনের মধ্যে এক জন ডেপুটেশানে, সিএইচসিপি ২৫ টি পদের মধ্যে তিনটা শূণ্য, স্বাস্থ্য সহকারী ৩৭টি পদের মধ্যে ১৪ টি শূণ্য রয়েছে।

বিপুল জনবল সংকটের কারণে তাই আশানুরুপ সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী কোনমতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন, জেনারেটরটি নষ্টের কারণে বিদ্যূৎ গেলে রোগীদের অন্ধকারে থাকতে হয়, শীতবস্ত্র অপ্রতুলতার কারণে রোগীদের শীতে কষ্ট পাওয়ার চিত্রও দেখা গেছে। এ ছাড়াও খাদ্যের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগতো রয়েছেই।
শু

ক্রবার রাত সোয়া ৯ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মোট নয় জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে মহিলা ওয়ার্ড রোগী শূণ্য। জরুরী বিভাগে গিয়ে কোন ডাক্তার পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা: সায়মা ইসলাম ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন। অথচ জরুরী বিভাগে তার হাসপাতালেই অবস্থান করার বিধান রয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া তাড়াশ পৌর এলাকার রোগী মো: মোনিন(৪০) জানান, সে দুইদিন যাবত হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুপুর থেকে কোন ডাক্তারের দেখা পাননি তিনি।

তার অভিযোগ, হাসপাতালে ওষুধ সরবাহ নামমাত্র। বেশিরভাগ ওষুধ তাকে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী আমশাড়া গ্রামের আব্দুল কাদের (৪৫) নামের আরেক রোগী বলেন, খাদ্যের মান এতোই নিম্ন যে, তিনি খেতেই পারছেন না। যে ধরনের খাদ্য সরবরাহ করা হয় তা নিম্ন মানের।

বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রেশমা খাতুন,আলেয়া বেগম ও মঞ্জুয়ারা খাতুন জানান,আমরা নিয়মিত গাইনী ডাক্তার আয়শা খানমের কাছে চিকিৎসা নিতাম। কিন্তু সম্প্রতি তিনি অন্যত্র বদলী হওয়ায় বিপাকে পড়েছি।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো:জামাল মিয়া বলেন,জনবল সংকটের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জনবলের পাশাপাশি অন্যন্য সেবা সহায়তা বৃদ্ধি একান্ত জরুরি। বিশেষ করে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে হাসপাতাপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখা প্রায় অসম্ভব।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা:মো:আব্দুল আজিজ বলেন, ইতোমধ্যেই ১০ জন ডাক্তারের পদায়ণ করা হয়েছে। বিশেষ্জ্ঞ চিকিৎসকের পোস্টিংয়ের চেষ্টা চলছে। আশাকরি চলতি বছরেই আমরা বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান করতে পারবো।

(এম/এসপি/মার্চ ০৭, ২০২০)