রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : আজ (৮ মার্চ) রবিবার কুড়িগ্রামের উলিপুরে হাতিয়া গণহত্যার প্রধান নেপথ্য নায়ক, আকবর মাওলানা, মকবুল হোসেনসহ ১৩ জন রাজাকারকে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দায়েরকৃত মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজারহাট ও উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ। 

পরোয়ানার প্রেক্ষিতে রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ কৃষ্ণ কুমার সরকারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের বালাকান্দি নলকাটা গ্রামের বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করে রবিবার দুপুরে আটক রাজাকার মকবুল হোসেনকে কুড়িগ্রাম জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

অপরদিকে, উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি তদন্তকারীদল বহুল আলোচিত এ হাতিয়া গণহত্যার তদন্ত শুরু করেন। তদন্তকারী দলের দুই দফা তদন্ত শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ০১/২০২০ইং। মামলা দায়েরের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এসব মানবতা বিরোধী অপরাধীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।

এরই প্রেক্ষিতে গত ৭মার্চ শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১২ জন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া ভবেশ গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের পূত্র মাওঃ আকবর আলী (৭৮), ডোবার পাড় (তৎকালীন রামখানা) গ্রামের মৃত আঃ জলিলের পুত্র শাহাজাহান আলী(৬৮), ওই গ্রামের মৃত নজিম উদ্দিনের পূত্র সাইদুর রহমান ওরফে সৈয়দ মাওলানা(৬২), উপজেলার দূর্গাপার ইউনিয়নের গোড়াই গ্রামের মৃত আঃ জব্বারের পূত্র নুর ইসলাম(৫৮), ইরফান আলীর দুই পূত্র ইছাহাক আলী(৬৩) ও ইসমাইল হোসেন (৬৬), মৃত আমান উল্লার পূত্র ওসমান আলী (৬৮), মতিউল্লার পূত্র আব্দুর রহমান(৬৩), বছিয়ত উল্লার পুত্র সোলেমান আলী(৭২),আঃ জব্বারের পুত্র আব্দুর রহিম (৬৩), মৃত ফজল উদ্দিনের পুত্র আঃ কাদের (৬৫), উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের দিগর মালতিবাড়ি গ্রামের মৃত সামসুদ্দিন সরকারের পুত্র মফিজুল হক(৮০)। ৮মার্চ পুলিশ পৃথক পৃথক ভাবে আটককৃতদের কুড়িগ্রাম জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।

এ বিষয়ে হাতিয়া ইউনিয়নের নীলকন্ঠ গ্রামের গণহত্যার শিকার বক্তার আরীর চাচা হায়দার আরী জানান, আমরা কোনোদিন কল্পনা করতে পারি নাই বিচার পাবো। এখন আশান্বিত। অপরাধীদের কঠিন সাজা হওয়া উচিৎ। একই গ্রামের নুরু মিয়া জানান, এদের বিচার হলে, আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।

এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুড়িগ্রাম জেলা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আমিনুল ইসলাম বলেন, ৪৯ বছর পর এই গণহত্যার বিচার হচ্ছে। এতে আমরা খুশী। তবে আরো অনেকে এই গণহত্যার সাথে জড়িত ছিল। তাদের নাম মামলায় আসলে আরো খুশী হতাম।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এই এলাকার চাঁদ কোম্পানির সেকেন্ড ইন কমান্ড রবিউস সামাদ বলেন, আমরা বিচারের অপেক্ষায় আছি৷

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুটি, রামখানা, নীলকন্ঠসহ আশপাশ গ্রামে, ১৯৭১ সালের উল্লেখ্য, ১৩ নভেম্বর মাত্র ২ ঘন্টার ব্যবধানে পাকিন্তানী সেনাবাহিনী, রাজাকার-আলবদর ও স্থানীয় দালালরা মিলে প্রায় ৭ শত নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা । শুধু তাই নয় পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যার পর একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ের পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। সেদিন তাদের হাত থেকে শিশু ও বৃদ্ধরাও রক্ষা পায়নি।

এই গ্রেফতারের খবরে হাতিয়ার শহীদ পরিবারগুলো ও মুক্তিযোদ্ধারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

এ ব্যাপারে ৮মার্চ রবিবার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান জানান, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি ওয়ারেন্টমূলে উলিপুরে একটি যুদ্ধাপরাধ মামলায় ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত হয়ে উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। আসামীরা মূলত: মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত। তাদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোর্টে পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

(পিএম/এসপি/মার্চ ০৮, ২০২০)