আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ২০০১ সালে বাবা মারা যাওয়ার আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে স্বারিত অনুদানের একটি চেক হাতে দিয়ে সংরণের দায়িত্ব দেন। মৃত্যুর আগে বাবা আমাকে বলেছেন-‘মনে করো এটি একটি চেক নয়, এই হলো স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। আর এই চেকে যে কলম দিয়ে বঙ্গবন্ধুু স্বার করেছেন, সেই কলমের কালি হচ্ছে তোমার মুক্তিযোদ্ধা ভাই রকিব এর রক্ত। এই চেকের মধ্যেই আমি খুঁজে পাই বঙ্গবন্ধু আর আমার ছেলে রকিবকে।

আবেগাপ্লুত কন্ঠে কথাগুলো বলেন, বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে স্বার করা অনুদানের একটি চেক পরম যত্নে দীর্ঘদিন থেকে সংরক্ষণ করা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান রাজিব সেরনিয়াবাত। সুযোগ পেলে চেকটি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে সংরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সরাসরি তুলে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। রাজিবের মেঝ ভাই আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাত ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক এবং যুদ্ধকালীন রাডারটিচ ইঞ্জিনিয়ার। অন্য বড়ভাই আগৈলঝাড়া উচলো পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত। তিনিও বীর মুক্তিযোদ্ধা।

বরিশাল জেলার তৎকালীন গৌরনদী বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরাল গ্রামে আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাতের জন্ম। মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু রবিক সেরনিয়াবাত সম্পর্কে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও গৌরনদী পাক হানাদারমুক্ত হয়েছিল ছয় দিন পর ২২ ডিসেম্বর। ওই সময় সরকারী গৌরনদী কলেজের পাক সেনাদের স্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থানরত সেনা সদস্যদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে রকিব সেরনিয়াবাত ছিলেন অন্যতম।

তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রকিব সেরনিয়াবাত ১৯৭৪ সালে সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল রাতে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে আততায়ীর গুলিতে রকিব সেরনিয়াবাত নিহত হন। গৌরনদীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশেই দাফন করা হয় বঙ্গবন্ধুর বোনজামাতা ও তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের স্নেহধন্য মুক্তিযোদ্ধা রকিব সেরনিয়াবাতকে।

সূত্রমতে, মর্মান্তিক ওই ঘটনার পর ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে রকিবের বাবা সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাতকে তিন হাজার টাকার অনুদানের একটি চেক প্রদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিজের স্বার রয়েছে ওই চেকটিতে। চেকটিতে উল্লেখ রয়েছে-‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, সোনালী ব্যাংক স্থানীয় কার্যালয়, ঢাকা। একাউন্ট নং- ৪৬৯৩।’

চেকটি সেকান্দার আলীর হাতে পৌঁছে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে। এরপর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্ব-পরিবারে শহীদ হওয়ার পর তার স্মৃতি ধরে রাখতে অনুদানের টাকা আর তোলেননি মুক্তিযোদ্ধা রকিব সেরনিয়াবাতের বাবা সেকান্দার আলী। পরিবারের এক সদস্য চেকটি ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা তুলতে গেলে সেখান থেকেও চেকটি ফেরত আনেন সেকান্দার আলী। পরিবারের অভাবের মাঝেও সন্তানহারা বাবা পরম যত্নে চেকটি সংরণ করে রাখেন তার কাছে।

রাজিব সেরনিয়াবাত বলেন, ২০০১ সালে বাবা (সেকান্দার আলী) মারা যাওয়ার আগে আমার কাছে চেকটি সংরণের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। মৃত্যুর আগে বাবা আমাকে বলেছেন, মনে করো এটি শুধু একটি চেক নয়, এই হলো বঙ্গবন্ধু। আর এই চেকে যে কলম দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বার করেছেন, সেই কলমের কালি হচ্ছে তোমার মুক্তিযোদ্ধা ভাই রকিব এর রক্ত। এই চেকের মধ্যেই আমি বঙ্গবন্ধু ও রকিবকে খুঁজে পাই।

রাজিব আরও বলেন, বাবা আমাকে আরও বলেছেন ‘চেকটি পারলে শেখের বেটির হাতে দিও’। সুযোগ পেলে চেকটি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে সংরণের জন্য তিনি (রাজিব) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সরাসরি তুলে দিতে চান বলে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

(টিবি/এসপি/মার্চ ০৮, ২০২০)