রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা বদর খন্দকারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৪/৫ জন দুর্বৃত্ত সরাসরি হামলায় জড়িত ছিল। হামলাকারীরা সবাই স্থানীয়। তিন স্তর সাজিয়ে এ হামলা চালানো হয়। গ্রেফতার হওয়া আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ও জিজ্ঞাসাবাদে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।  

পুলিশ বলছে, হত্যাকান্ডের হামলাকারী ও পরিকল্পনাকারীদের সম্পর্কে পরিষ্কার হওয়া গেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তরের জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। খুনীদের গ্রেপ্তারের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কোপানোর প্রকৃতি দেখে মনে হয়েছে বদরের হাত-পা কেটে দিয়ে তাকে পঙ্গু করে দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল। ধারালো অস্ত্রের কোপে তার দুই পায়েরই হাঁটুর নিচ থেকে ও ডান হাতের কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাঁ হাতের তিনটি আঙুল পড়ে যায়। শরীরের অন্য কোথায়ও নেই আঘাতের চিহ্ন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই ইউনিয়নের টি চরকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে লোহাগড়া-নড়াইল সড়কে বদর খন্দকারকে একদল দুর্বৃত্ত নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করে। রাত ৯টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানের চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।নিহত বদর খন্দকার লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য। এ হত্যার ঘটনায় ১৬ জনের নামে ও অজ্ঞাত পরিচয় ৩-৪ জনকে আসামি করে ২৫ ফেব্রুয়ারী নিহত বদর খন্দকারের স্ত্রী নাজনীন বেগম লোহাগড়া থানায় মামলা করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হত্যাকান্ডের ২৫ ফেব্রুয়ারী মতিউর রহমান ওরফে মুন্না (৩৫) নামে কালনা গ্রামের এক যুবককে গোপালগঞ্জ শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। ২৬ ফেব্রুয়ারী চরকালনা গ্রামের রুহল আমিনকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সদস্যরা গ্রেফতার করে চরবগজুড়ি গ্রামের রফিককে (৫০)। গত ৩ মার্চ সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চরকালনা গ্রামের আলী মিয়া মোল্লাকে (৪৫)। চরবগজুড়ি গ্রামের বাবু মোল্লাকে (৪৫) কে গত ৪ মার্চ সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ধানকোড়া গ্রামে তার আত্মীয়র বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরের ৪জন এজাহারভুক্ত আসামী নয়।

পুলিশ জানায়, আলী মিয়া কালনাঘাটে মোটরসাইকেল স্ট্যাটার (মোটরসাইকেল সিরিয়ালকারী)। বদরকে কোপানোর পর হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি তিনটি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল দিয়ে সহযোগিতা করেন। হামলাকারীরা হামলার পরপরই লোহাগড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যা বাজার হয়ে মধুমতি নদীর তেতুলিয়া ঘাট পার হয়ে ভাটিয়াপাড়া ও আলফাডাঙ্গা হয়ে পালিয়ে যায়। গত ৩মার্চ রাতে ওই তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, বদর তার ইটভাটা থেকে লোহাগড়ার দিকে রওনা হওয়ার সময়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এক যুবক বদরের মোটরসাইকেলে ওঠে। হামলার স্থলে ওই যুবক নেমে যাবেন বলে মোটরসাইকেল থামাতে বলেন। ওই যুবক নেমে যাওয়ার সময়ে মোটরসাইকেল ধাক্কা দিয়ে বদরকে ফেলে দেয়। এরপরই তাকে কোপানো হয়। অন্তত ৪/৫ জন ছ্যান দা দিয়ে তাকে কোপায়। ১২-১৩ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এ হামলায় নানাভাবে সহযোগিতা করে। তিনটি স্তর সাজিয়ে হামলা চালানো হয়। ৪/৫ জন ছিল মূল হামলাকারী। প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত ছিল একটি দল এবং ব্যস্ত সড়কে হামলার সময়ে কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল বন্ধ করে রাখে ওই দলটি। মামলায় ১৬ আসামীর মধ্যে সরাসরি হামলায় জড়িত এমন অন্তত ৩/৪ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়নি। আবার ওই ১৬ আসামীর মধ্যে অন্তত ৬/৭ জন নূন্যতম জড়িত নয়। হামলায় জড়িত সবাই স্থানীয় ও তার নিকট আত্মীয়। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।

মামলার তদন্তকরী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাস বলেন, ‘হামলাকারীদের সম্পর্কে পরিষ্কার হওয়া গেছে। তারা এলাকার বাইরে চলে গেছে। তাদের নিজস্ব মুঠোফোন (মোবাইল) বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশের কয়েকটি দল তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। গ্রেফতার হওয়া রুহল আমিনকে দুদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাবু মোল্লাকে রিমান্ডে আনতে আদালতে আবেদন দেওয়া হয়েছে।’

নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন,‘প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুতই গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে। তবে যারা নূন্যতম জড়িত নয়, তারা হয়রানীর শিকার না হয়, সেদিকেও পুলিশের লক্ষ্য রয়েছে।’

(আরএম/এসপি/মার্চ ০৯, ২০২০)