কুমিল্লা প্রতিনিধি : পদ্মার পানিতে হারিয়ে গেলো কুমিল্লার বরুড়ার একই পরিবারের চার সদস্য। গত ৪ আগস্ট উত্তাল পদ্মায় ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চে থাকা ২ শতাধিক যাত্রীর মধ্যে ছিলো কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাঁছা ইউনিয়নের মেড্ডা গ্রামের অবসর প্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক নুরুল ইসলামের ছেলে ফখরুল ইসলাম রুবেল (৩৬), স্ত্রী শিমুল আক্তার (৩০), জান্নাতুল মারজানা ফাহিজা (৭)ও মারহাম ফাতেহা (৩)। কিন্তু পিনাক-৬ এর সাথে হারিয়ে গেলো পরিবারের চারটি মুখ।

ফুটফুটে দুই নাতনী ও পুত্রবধূর হাসিমুখ আর দেখবেন না দাদা নুরুল ইসলাম। লঞ্চডুবির পাঁচ দিন পর মরদেহেরও সন্ধান পাচ্ছেন না স্বজনা হারানো অভাগারা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা ইউনিয়নের পেড্ডা গ্রামের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলামের ছেলে ফখরুল ইসলাম রুবেল ফখরুল ইসলাম রুবেল ঢাকার এইচ.ডি. ডিজাইন বায়িং হাউজে এবং স্ত্রী শিমুল আক্তার (৩০) পঙ্গু হাসপাতালে চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় বাসা নিয়ে বসবাস করতেন। ফখরুল ইসলাম রুবেল এর শ্বশুরবাড়ি ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার সাতরশি গ্রামে। স্ত্রীসহ ২ মেয়েকে নিয়ে ঈদ-উল-ফিতর পালন করতে তার শ্বশুর বাড়ি ফরিদপুর জেলার সদলপুর উপজেলার সাতরশি গ্রামে গিয়েছিলেন ফখরুল ইসলাম রুবেল ।
দুর্ঘটনার দিন ছুটি শেষে ফরিদপুর থেকে সপরিবারে বাড়ি ফিরছিলেন ফখরুল। স্ত্রী শিমুল আখতার (৩০), মেয়ে জান্নাতুল মারজান ফাইজা (৭) ও মারহান ফাতেহাকে (৩) নিয়ে রওয়ানা হন ফখরুল। ঈদ শেষে ঢাকা ফেরার পথে শ্বশুর বাড়ি থেকে ভোর ৬টায় মা-বাবার সাথে মোবাইলে কথাও বলেন। সকাল সাড়ে ৮টায় কাওরাকান্দি থেকে পিনাক-৬ লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু পিনাক-৬ পদ্মা নদীর অতলে তলিয়ে দিয়েছে একই পরিবারের চারজনকে। দুপুরে ওই দিন লঞ্চ দুর্ঘটনার খবর টেলিভিশনের শুনে নুরুল ইসলাম মাষ্টার মোবাইল করে ফখরুলের ফোন বন্ধ পান। সেই লঞ্চে ফখরুলের সাথে তার শ্যালক, শ্যালকের বৌ ও সন্তানও ছিল বলে জানা যায়।
ফখরুলের শ্যালকের ছেলে কাউসার জানান, দূর্ঘটনা কবলিত লঞ্চের যাত্রী ছিল তারা। দুর্ঘটনার পর আমরা এখনও তাদের কোন খোঁজ পাইনি। এমনকি লাশের সন্ধানও পাইনি।
ফখরুলের বাবা নুরুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নিষ্ঠুর পদ্মা আমার ছেলে, পুত্রবধু ও নাতিদের কেড়ে নিয়েছে। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহ ফেরত চাই।
এদিকে পদ্মার বুকে নিখোঁজ হওয়া ফখরুল ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য মাওয়া ফেরীঘাটে নির্ঘুম দিনরাত কাটাচ্ছেন তার দুই ভাই ও ভাগিনা। পুত্র, পুত্রবধূ আর দুই নাতনী হারানোর শোকে পাগল ফখরুলের বাবা-মা। আর ফখরুলের বোনেরা ফেরত চান তাদের স্বজনদের মৃতদেহ।
(এইচকেজে/এএস/আগস্ট ০৯, ২০১৪)