রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের সল্লা ইউনিয়নের টিকুরিয়াপাড়া নামকস্থানে এলাকাবাসীর বাঁধা উপেক্ষা করে নিউ ধলেশ্বরী নদীতে ভেকু দিয়ে বুক চিরে অবাধে দিনরাত মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তারা নদীতে বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বন্ধ করার পাশাপাশি তীর কেটে ফেলছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নধী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পের আওতায় নিউ ধলেশ্বরী নদীর কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা ব্রিজ থেকে উত্তরাংশে ১৪.৫ কিলোমিটার খনন কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেড। এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেড তাদের নির্ধারিত এলাকা খনন করতে মা এণ্টারপ্রাইজ নামে অপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাব ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ করছে।

ওই ১৪.৫ কিলোমিটারের বাইরে নিউ ধলেশ্বরী নদীর টিকুরিয়াপাড়া এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী সাইফুল ইসলাম, আ. জলিল ও মাসুদ রানা ভেকু দিয়ে নদীতীরের এটেল মাটি কেটে অবাধে বিক্রি করছে। এলাকাবাসী মাটি কাটতে বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকে দা, ফালা, লাঠি, বল্লম নিয়ে আক্রমন করতে আসে। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে টিকুরিয়াপাড়া, জোকারচর, কদিমহামজানী, দশকিয়া উত্তরপাড়া ইত্যাদি গ্রামে নদী ভাঙনের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে।

সরেজমিনে স্থানীয় মো. সয়েদ আলী, মো. আমান উল্লাহ, মো. সোনা মিয়া, আব্দুল মজিদ, মো. আব্দুল্লাহ, ইলিয়াছ আলী, জিন্নত মিয়া, মো. আবুল হোসেন, মো. নিজাম উদ্দিন সহ অনেকেই জানান, নদী খনন প্রকল্পের বাইরে টিকুরিয়াপাড়া এলাকায় কদিমহামজানী গ্রামের প্রভাবশালী সাইফুল ইসলাম, আ. জলিল ও মাসুদ রানা নদীতে বাঁধ দিয়ে ট্রাক চলাচলের রাস্তা বানিয়ে তিনটি ভেকু দিয়ে তীরের এটেল মাটি কেটে অবাধে বিক্রি করছে। এতে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কায় তারা বাঁধ দিতে গেলে তাদের পক্ষের লোকজন দা, ফালা, লাঠি, বল্লম নিয়ে মারতে আসে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোন সুফল হয়নি বলে তারা অভিযোগ করেন।

নদীর মাটি বিক্রেতা মাসুদ রানা জানান, তিনি এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেডের কাছ থেকে তিনি নিউ ধলেশ্বরী নদীর ২০০ মিটার খনন কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন। নদীতে এটেল মাটি থাকায় ভেকু দিয়ে কাটতে হচ্ছে। মাটি বিক্রির বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকেীশলী ও এশিয়ান ড্রেজিং লিমিটেডের খনন কাজ তদারককারী মো. রবিউল ইসলাম জানান, মাসুদ রানা নামে এক ব্যক্তি ২০০ মিটার নদী খনন করছেন। তবে সাইফুল ইসলাম বা আ. জলিল নামে কেউ নদী খননের সাথে জড়িত নয়। মাটি বিক্রি করা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে তিনি জানান। তিনি উল্লেখিত স্থান পরিদর্শন করে উর্ধতন কর্তপক্ষকে জানাবেন।

কালিহাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার রহমান জানান, বিষয়টি তার জানা ছিলনা। তিনি খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, নদী উন্নয়নে পানিউন্নয়ন বোর্ড কাজ করে থাকে। কিন্তু নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ বা তীর কেটে মাটি বিক্রি করার বিষয়টি স্থানীয় সিভিল প্রশাসন দেখভাল করে থাকে। তারপরও বিষয়টি তিনি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

(আরকেপি/এসপি/মার্চ ২১, ২০২০)