আশরাফ সিদ্দিকী বিটু : ঈদের পর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে দৌড়ঝাপ এখন আর নেই। আসলে তাদের আন্দোলনের কোন রূপরেখা ছিল না। বেগম খালেদা জিয়ার ওমরাহ পালনকালে যারা ভেবেছিলেন যে মা-ছেলে মিলে কোন কর্মসূচী দিবেন, তারা ভাবতে পারেননি যে এমন কিছু বাস্তবে হবে না। কিংবা সিনিয়র নেতারা জেনেও কর্মীদের তা বলেননি।

বিএনপির কর্মসূচী নিকট অতীতে সফল হয়নি। সরকার যে পথে এতে বিএনপির তেমন কোন করণীয় নেই। বরং সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি খুব বড় ভুল করেছে, তা বিএনপি ভিতরে ভিতরে অনুধাবন করলেও বাইরে বলছে না।

তাদের সাংগঠনিক অবস্থা এত দুর্বল যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা যাচ্ছে না। খালেদা জিয়ার জন্য কোন প্রকার সমাবেশের আয়োজন করতেস্থানীয় নেতাকর্মীদের অনাগ্রহ রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল শেষে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়, তখনই নানা অনৈক্যের আভাস পাওয়া যায়। এরপর ২০১১ সালের ১৬ মার্চ মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার পর ওই বছর ৬ এপ্রিল সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়। তিনি ৪ বছরেরও বেশি দিন ভারপ্রাপ্ত আছেন। এনিয়ে দল কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলো কোন কার্যক্রম দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি গত কয়েক বছর শুধু কূটনৈতিক মহলে যোগাযোগ করেছে, আর সরকারের ইমেজ নষ্ট করতে চেয়েছে। অথচ বিএনপি দল হিসেবে বেশি অকূটনৈতিক আচরণ করেছে যা দেশবাসী কয়েক মাস আগেও প্রত্যক্ষ করেছে।

ঈদকে ঘিরে আসলে খালেদা জিয়া যেসব ইফতার অনুষ্ঠানে গেছেন সেগুলোকে বিএনপি রাজনৈতিক রূপ দিয়ে ইফতার রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখতে মূলত আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় যে হারে বিএনপির নেতিবাচক খবর বের হয় এতে সহজে বোঝা যায়, দলটির ভঙ্গুর অবস্থা। যদিও এজন্য তারা সরকারকে দোষারোপ করতে চায়। কিন্তু বাস্তব সত্য হল, বিএনপি কোনদিন কোন আন্দোলন সফল করতে পারেনি। জামায়াত শিবির তাদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনে থেকেছে। জামায়াত-বিএনপির নিবিড় সম্পর্ক এখন কোন পথে তা বলা মুশকিল। তবে তাদের সম্পর্ক সহজে ভাঙনের মুখ দেখবে না। সাময়িক একে অপরকে বিশ্বাস না করলেও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক আর্দশিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং অর্থনৈতিকও।

ঈদের আগে আন্দোলনের কথা বড় করে বললেও বিএনপির অনেক নেতা নানা কারণে বিদেশ সফরে গেছেন। আর ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়া। এক কমিটি নিয়ে বেগম জিয়াসহ সিনিয়র নেতারা হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কারো কথা শুনছে না। বেগম জিয়া বারবার মিটিং করে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। বিএনপি সরকারে থাকার সময়ও কোন কাজে তাদের কখনই নিয়ন্ত্রণ ছিল না; লুটপাটও ছিল নিয়ন্ত্রণহীন।

লক্ষণীয় বিষয় হল, প্রতিদিন দলীয় কার্যালয়ে বসে নেতৃবৃন্দ হুমকি ধামকি দিচ্ছেন, কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা এখন কথায় কান দিচ্ছে না। ঈদ গেল ১০ দিনেরও বেশি হয়েছে। কিন্তু দল থেকে কোন কর্মসূচী আসছে না। বরং ঢাকা মহানগর আহবায়ক কমিটির কোন্দল মেটাতে পারছে না দলটি। এছাড়া বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে দলের নেতাকর্মীরা আস্থা পাচ্ছে না। কারণ নেতারা কেউ কেউ খালেদা জিয়াকে, আবার কেউ কেউ তারেক রহমানকে তুষ্ট করতে কাজ করছেন। এতেই দিশেহারা বিএনপির নেতাকর্মীরা।

সরকারের কোন ভাল কাজকে বিএনপি স্বাগত জানায় না কোনদিন। মায়ানমারের সাথে সুমদ্রসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশ জয়ী হলে বিএনপি প্রথমে ধন্যবাদ জানিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। তাই জুলাই মাসে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমার রায়ে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে বিএনপি আগের ভুল থেকে সরে এসে আর ধন্যবাদ জানায়নি। বরং অস্তিত্বহীন দক্ষিণ তালপট্টি নিয়ে মাতামাতি শুরু করে। অথচ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া এবং পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার সরকার দক্ষিণ তালপট্টি যখন ছিল তখন কোন ব্যবস্থা নেয়নি এবং মানচিত্রে অর্ন্তভুক্ত করেনি।

বিএনপির জন্মই হয়েছে ইতিহাস বিকৃতি আর প্রতিক্রিয়াশীলতার মধ্য দিয়ে। তাই তারা শুধু প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু ভাল কাজকে তারা কখনও গ্রহণ করে না। শুধু একটি ছোট্ট উদাহরণেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। বিএনপির সময় যে দুটি বিসিএসক্যাডারে নিয়োগ হয় তাতে অভাবনীয় ও ভয়াবহ দুনীর্তি হয়। পরে ১/১১ সরকার ২৭তম বিসিএসের পুননিয়োগ প্রদান করে। সে সময় হাতেগোনা ডাক্তার নিয়োগ প্রদান করা হয়। অথচ গত সাড়ে ৫ বছর ৬টি বিসিএসে নিয়মিত নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। শুধু ১২ হাজারের বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা স্বাধীন বাংলাদেশে রেকর্ড। আর বিএনপির সময় আওয়ামী লীগ আমলের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

বিএনপি নেত্রীসহ অন্যান্য দলীয় নেতারা ঈদের আগের আন্দোলন নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু ঈদের পর তাদের অনেকে এখন একদম চুপ। তারাও হয়তো জানতেন না, ঈদের পর কি করা হবে ? শুধু বলার জন্য বলেছেন! সরকার ভেসে যাবে বলে দেয়া বক্তৃতা এখন বিএনপির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে চলেছে।

আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির সরকারের মতো এমন কোন কুকর্ম বা দূর্নীতি করেনি, যে তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে আন্দোলনে নামাতে পারবে। বরং মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীর সুফল পাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে আরো বেশী সুফল জনগণ পাবে। অথচ ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি জাতিকে দূর্নীতি ছাড়া তেমন কিছু উপহার দিতে পারেনি। তবে ইতিমধ্যে দুর্বার আন্দোলনের কথা থেকে বিএনপি সরে এসেছে। যেমন ঈদের দিনই খালেদা জিয়া বলেছেন, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা। বিএনপি নিজেরাই তাদের ঘোষণা থেকে সরে এসেছে। মূলত আন্দোলন চলছে বিএনপির ভিতরে। তাই ঢাকা মহানগর কমিটি করতে গিয়ে নানাবিধ সমস্যায় পড়েছে বিএনপি। ঈদের পর আন্দোলনের কথা বললেও স্বয়ং বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ঈদের পর কোন কথা বলেননি এবং কোন কর্মসূচী ঘোষণা করতে পারেননি। শুধু দলের ঘুমন্ত নেতাকর্মীদের সামনে মুখ রক্ষা করতেই বিএনপি নেতারা হয়তো আন্দোলনের কথা বলেছেন, আর নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে চিৎকার করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই সরকারের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে এবং কাজ করে যাচ্ছে।

বিএনপির আন্দোলনের প্রতি মানুষের কোন আস্থা নেই। বিএনপির আন্দোলন হল মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বাস-ট্রাকে আগুন দেয়া, রাতের অন্ধকারে রাস্তায় আগুন দেয়া, জামায়াতের সহিংসতা ইত্যাদি। বিএনপি এসব পুনরায় করুক তা কোন সুস্থ মানুষ প্রত্যাশা করে না। গণতন্ত্রের অর্থ এই নয় যে, বার্ন ইউনিটে মানুষের অসহায় আর্তনাদ। মানুষ এসব থেকে মুক্তি চায়।

নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানুষ আনন্দে ঈদ করতে পেরেছে। হত্যাযজ্ঞ আর কারো কাম্য নয়। বিএনপির এই হত্যার রাজনীতিই আজ বিএনপিকে বিপাকে ফেলেছে। বিএনপির সামনে কোন ইস্যু নেই, যা দিয়ে সরকার বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি অবস্থান নিতে পারে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উল্টো বিএনপি পিছিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির হুমকি হল, নিজেদের ঘর গোছানো আর কর্মীদের আস্থা অর্জন। অথচ এসব করতে গিয়ে উল্টো বিএনপির ভিতরে ঝামেলা হচ্ছে। বিএনপির মধ্যে এখন নীরব আন্দোলন চলছে, যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ নয়।

লেখক : রাজনৈতিক কর্মী।

(এএস/অ/আগস্ট ০৯, ২০১৪)