ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে ১লা মার্চ হতে গত ২০শে মার্চ পর্যন্ত বিদেশী নাগরিকসহ মোট ২৭৭ জনের বিদেশ হতে আগমন ঘটেছে। বিদেশ হতে আগতদের ১৪ দিন হোম কোয়রেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা রযেছে। কিন্তু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইপিজেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশী নাগরিক এবং প্রবাসীরা সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে চলাফেরা এবং স্বজনদের সাথে মেলামেশা করছেন। যেকারণে শংকিত হয়ে পড়েছে ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য বিভাগ ও ঈশ্বরদীর সাধারণ মানুষ । বিদেশীসহ সদ্য আগত প্রবাসীদের ঈশ্বরদীর হাট-বাজার, হোটেল- রেঁস্তোরা, বাসটার্মিনাল, সিএনজি স্ট্যান্ড, ফাস্টফুড ও চা দোকানে অবাধে চলাচল করেছে। এমনকি বিদেশীদের অবাধ চলাফেরায় মাক্সও ব্যবহার করতে দেখা যায় না। 

ইমিগ্রেশন হতে ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরীত তথ্যে দেখা যায়, ১লা মার্চ হতে গত ২০ শে মার্চ পর্যন্ত ১৯০ জন বিদেশী নাগরিক এবং ৮৭ জন স্থানীয় বাংলাদেশী ঈশ্বরদীতে এসেছে। বিদেশীরা রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন, জার্মানী, কোরিয়া, জাপান, চীন, ফিলিপাইন, ব্রিটেন এবং কাজাখিস্তান হতে এসেছে। রাশিয়া, বেলারুশ, জার্মানী, ইউক্রেন, বিট্রেন ও কাজাখিস্তানের নাগরিকরা সকলেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত। জাপান, চীন ও কোরিয়ানরা ঈশ্বরদী ইপিজেডে এবং ফিলিপাইনের ১ জন মল্লিক গ্রুপ এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজে কর্মরত।

১লা মার্চ হতে ৭ই মার্চে মধ্যে যারা এসেছে ১৪ দিন হোম কোয়রেন্টাইনের মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। প্রবাসীরা মালযেশিযা, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, কাতার, কুয়েত,ওমান, জর্ডান, ইতালি ও কানাডা হতে দেশে প্রবেশ করেছে। মুজিব বর্ষ উদ্যাপনের আগে পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যেকারণে বিদেশ হতে আগত বিদেশী ও প্রবাসীরা অবাধে চলাচল করেছে।

১লা মার্চ হতে ৮ই মার্চের মধ্যে যারা প্রবেশ করেছেন, এদের বেশীরভাহই হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিল না। ২২শে মার্চ পর্যন্ত হোম কোয়রেন্টাইনের ১৪দিন মেযাদ উত্তির্ণ হলেও এরা করোনা ভাইরাসের জীবানু মুক্ত কিনা, তা পরীক্ষার ব্যবস্থা ঈশ্বরদীতে নেই।

৯ই মার্চ হতে ২০ শে মার্চের মধ্যে মোট ১২০ জন এসেছে। এদের মধ্যে ৯২জন বিদেশী এবং ২৮ জন প্রবাসী। বিদেশীদের ২জন ইপিজেডের জাপানী নাগরিক। অন্যান্যরা বেশীরভাগই রাশিয়ান ও বেলারুশিয়, যারা রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত।

রূপপুরে কর্মরত বিদেশীরা প্রকল্পের আবাসন গ্রীণসিটি ও বাংলা কুটির ছাড়াও ঈশ্বরদী শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করে। ইপিজেডের ওই ২ জাপানী পিয়ারাখালিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। বিদেশ হতে আগতদের হোম কোয়ারেন্টাইন মানার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ করার সরকারি নির্দেশনা ছিল। বেশীরভাগ বিদেশী ও প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইন না করেই অবাধে চলাফেরা করেছে বলে স্থানীয় জনগোষ্ঠি ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শামীম বলেন, ঢাকার পর ঈশ্বরদী করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। রাশিয়ান ভাষা জানা এই চিকিৎসক আরো জানান, রবিবার সন্ধ্যার পর রূপপুর প্রকল্পের আবাসন প্রকল্প গ্রীনসিটিতে গিয়ে বিফল হয়ে ফিরতে হয়েছে।

তিনি বলেন, সদ্য আগত রাশিয়ান সনাক্ত করে হাতে সীল দিতে যেয়ে কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। রাশিয়ানদের কেউ কেউ সদ্য আগতদের যেসব রূম দেখিয়েছিল, সেখানে যেয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি। আরো অনেকে কে কোথায় আছে তাও জানা যায়নি। তিনি আরো বলেন, সদ্য আগত বিপুল সংখ্যক বিদেশী ও প্রবাসীদের দেখভালের জন্য স্বল্প জনবল নিয়ে করোনা সনাক্ত করণের কিট ও পিপিইসহ প্রটেকশনের কোন সরঞ্জাম না থাকায় আমরাই চরম নিরাপত্তাহীনতা ও উদ্বেগের সাথে দিন কাটাচ্ছি।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আসমা খান বলেন, আমাদের সচেতনা বিষয়ে কথা বলা ছাড়া আর কিছু করার উপায় নেই। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা আইসুলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হলেও করোনা সনাক্তকরণের কীট নেই।

প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা অল্প কয়েকজনের বাড়িতে যেয়ে তাদের ১৪ দিন বাইরে না বের হওয়ার জন্য বলেছি। বেশীরভাগেই সঠিক ঠিকানা না পাওয়ায় খোঁজ নেয়া সম্ভব হয়নি।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার (তদন্ত) জানান, আগত ৮৭ জনের মধ্যে ঠিাকানা খুঁজে মাত্র ১৬জন বাংলাদেশীর বাড়িতে যেয়ে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব রায়হান জানান, বিদেশীদের বিষয়টি স্পর্শকাতর। রূপপুরের প্রকল্প পরিচালক বরাবরে সদ্য আগতদের তালিকা প্রেরণ করে জানানো হয়েছে।

তিনি অরও বলেন, প্রকল্প এলাকা প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এবং সেনাবাহিনী দ্বারা নিযন্ত্রিত। যারা সম্প্রতি এসেছে তাদের প্রকল্প এলাকায় কাজের জন্য প্রবেশের সিকিউরিটি পাশ ইস্যু করা হয়নি বলে সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছেন। তবে গত দুই দিনে বিদেশীদের অবাধে চলাফেরা অনেকটাই কমে গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। প্রবাসীদের যে তালিকা পাঠানো হযেছে, তাতে যে ঠিকানা রযেছে সেটি বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় পূরণকৃত তথ্য ফরম। এতে পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না থাকায় বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর সঠিক অবস্থান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি এবং স্থানীয়ভাবেও করোনার বিষযে সচেতনাতা সৃষ্টিতে ব্যপক প্রচারণা চালানো হলেও বিদেশী ও প্রবাসীদের গতিবিধি রোধ করা সম্ভব হয়নি।

রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, করোনা বিষয়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ান সরকারের গাইডলাইন ও বিধি বিধান অনূসরণ করা হছে। প্রকল্প এলাকায় প্রবেশের সময় নিয়মিত তাপমাত্রা পরিমাপ ও স্ক্যান করা হচ্ছে। যাদের তাপমাত্রা বেশী তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। দেশীয় কর্মীদের সুরক্ষায় হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন, হেক্সোসলসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।

সদ্য আগতদের হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়ে তিনি বলেন, রাশিযান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের লোকদের ১৪ দিনের যে বিধি-বিধান তা মেনে চলার জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। সেভাবেই বিধি বিধান মেনে রূপপুরের কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প ও ঈশ্বরদী ইপিজেড এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১২টি দেশের প্রায় ২ হাজার বিদেশী নাগরিক ঈশ্বরদীতে বসবাস করছে। এসব বিদেশী নাগরিক প্রায়ই নিজ দেশে যাতায়াত করেন এবং রূপপুর প্রকল্প ও ইপিজেড-এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পরিদর্শনে আসেন বিদেশীরা। এসব বিদেশী নাগরিক অবাধে ঈশ্বরদী বাজার ও বিভিন্ন স্থানে অবাধে চলাচল করে। বিদেশী ও প্রবাসীরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করায় এদের দ্বারা করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ঈশ্বরদীর সকল স্তরের মানুষ আতংকিত।

(এসকেকে/এসপি/মার্চ ২৪, ২০২০)