নিউজ ডেস্ক : কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) চাকরি প্রবিধানমালায় পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট জটিলতা ও অসংগতি নিরসনে আইনি নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানী রেজোয়ান মোল্লা ও বিএআরসির এনএটিপি প্রকল্পে কর্মরত মনিটরিং কর্মকর্তা দীপক কুমারের পক্ষে গত মঙ্গলবার ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন এই নোটিশ প্রদান করেন।

বিএআরসির সদস্য পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), নির্বাহী চেয়ারম্যান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে এ নোটিশ পাঠানো হয়।

আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে সৃষ্ট অসংগতির ব্যাখ্যা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে নোটিশে বলা হয়েছে, ‘অন্যথায় এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সংক্ষুব্ধ বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম বা এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা প্রবিধানমালায় আনা পরিবর্তনের কারণে বিএআরসিতে উচ্চতর পদে চাকরির আবেদনের সুযোগ হারিয়েছেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিএআরসি নতুন প্রবিধানমালা অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে দীর্ঘদিন এই নিয়োগে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা হতাশ হন। তারা বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সের অসংগতি নিরসন ও জাতীয় কৃষি গবেষণা ব্যবস্থা বা এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অভিন্ন প্রবিধানমালা প্রণয়নের দাবি জানান।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা ২০১৯ অনুযায়ী গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা সবোর্চ্চ ৩৯ বছর উল্লেখ করা হয়, যা একই প্রতিষ্ঠানের আগের চাকরি প্রবিধানমালার সম্পূর্ণ বিপরীত। ১৯৮৯ সালের প্রবিধানমালায় এটি ছিল সর্বনিম্ন ৩৯ বছর।

একইভাবে অন্যান্য পদ যেমন- ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন কারিগরি সম্পাদক (সিনিয়র সায়েন্টিফিক এডিটর), সিনিয়র প্রটোকল অফিসার, সিনিয়র সহকারী পরিচালক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স নির্ধারণে এ ধরনের অসংগতি তৈরি হয়েছে। আগের প্রবিধানমালা ১৯৮৯ অনুযায়ী সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব পদে বয়স সর্বনিম্ন ৩৫ বছর উল্লেখ থাকলেও ২০১৯ সালে সংশোধিত প্রবিধানমালায় ৩৫ বছরকে সবোর্চ্চ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা ২০১৯ অনুযায়ী বিভিন্ন পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিএআরসির বয়সের সীমা নির্ধারণে বড় ধরনের অসামঞ্জস্যতা দেখা দিয়েছে।

জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেমভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চাকরি প্রবিধানমালায় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লিখিত বয়সসীমা বিএআরসির চাকরি প্রবিধানমালায় উল্লিখিত সর্বোচ্চ বয়সের চেয়ে বেশি। যেমন- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের চাকুরী প্রবিধানমালায় প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লিখিত সর্বোচ্চ বয়স তদূর্ধ্ব ৩৯ বছর হলেও এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মনিটরিং ও পামর্শক প্রতিষ্ঠান বিএআরসির উল্লিখিত বয়স সর্বনিম্ন ৩৯ বছর। এতে করে বয়সে অপেক্ষাকৃত নবীন ও কম অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের কৃষি গবেষণা সিস্টেমের তদারক ও মনিটরিং সংস্থা হিসেবে পরিচিত বিআরসিতে নিয়োগ লাভের সুযোগ তৈরি হলো।

বাংলাদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীর বয়স পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের উল্লিখিত পদে পদোন্নতির সময় পদোন্নতি প্রাপ্তদের বয়স ছিল ৪৫-৫০ বছর এবং অধিকাংশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পদোন্নতির চিত্র প্রায় একইরকম। একজন বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন গবেষণা, গবেষণা সমন্বয়, গবেষণা পরীবিক্ষণ ও পর্যালোচনা সংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত থাকার পর উল্লিখিত কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে সম্পাদনের সক্ষমতা অর্জন করে এবং চতুর্থ গ্রেডে পদোন্নতি প্রাপ্ত পান। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক যদি ৩৯ বা তার কম বয়সের কোনো প্রার্থীকে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার মধ্যে বয়সের দীর্ঘ ব্যবধান সৃষ্টি হবে। এবং পরবর্তীতে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পরিচালক পদে পদোন্নতি ও পদায়নে স্পষ্ট অসামঞ্জস্যতা দেখা দেবে।

বিজ্ঞানীরা জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল যেহেতু কৃষি গবেষণা সিস্টেমের সবোর্চ্চ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হচ্ছে গবেষণা সমন্বয় এবং আন্তঃপ্রতিষ্ঠান সংযোগ জোরদারকরণ, নার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা কার্যক্রম পরীবিক্ষণ ও পর্যালোচনা, প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা সক্ষমতা জোরদারকরণ সহায়তা করা। এ সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু বিএআরসিতে একজন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। তাই তার পরিপূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করার জন্য ১২-১৫ বছর এই ধরনের কাজে সংশ্লিষ্ট থাকা প্রয়োজন হয়। বাস্তবতার নিরীক্ষে একজন গবেষণা কর্মকর্তাকে উল্লিখিত কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলে তার বয়সসীমা ৪০ অতিক্রম করে। কেননা বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা থেকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদন্নোতির জন্য সর্বনিম্ন ৫ বছর ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা থেকে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে পদন্নোতির জন্য সর্বনিম্ন ৫ বছরসহ কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়। এ বাস্তবতা বিবেচনায় বেশিরভাগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের বয়সসীমা তদূর্ধ্ব ৩৯ বছর রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে আগে নিয়োগগুলোতে তদূর্ধ্ব ৩৯ বছর বয়সের প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার বিধান চালু ছিল বিধায় দক্ষ এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীরাই নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যার ফলশ্রূতিতে দক্ষ এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল।

এ ছাড়া, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদটি জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৪র্থ গ্রেডের (বেতন স্কেল ৫০,০০০-৭১২০০/-) নীতি নির্ধারক পর্যায়ের একটি পদ। গবেষণা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক পদটিও ৪র্থ গ্রেডভুক্ত। এ পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সের বাধ্যবাধকতা নেই। সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সের অসংগতি নিরসন করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কৃষি গবেষণা ব্যবস্থা বা এনএআরএসভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অভিন্ন প্রবিধানমালা প্রণয়নের দাবি জানান।

(ওএস/এসপি/মার্চ ২৬, ২০২০)