নিউজ ডেস্ক : চাল, ডাল, তরিতরকারি আর মাছের হাটে আপনি নিত্য দিনই যান। তাই বলে প্রেমের হাট! শুনতে অবাক লাগলেও ভিয়েতনামের আদিবাসী অধ্যুষিত পর্যটন এলাকা সাপায় বিশেষ কোনো শনিবার রাতে বসে এমনই হাট। ব্যতিক্রমী সেই হাটে গিয়ে পর্যটকরা যেমন খুঁজে নিতে পারেন মনের মানুষ, তেমনি স্থানীয়রাও বেঁছে নিতে পারেন জীবনসঙ্গীকে।

জানা গেছে, ভিয়েতনামের পাহাড়ি এলাকায় ছোট্ট একটি গ্রাম সাপা। গ্রামটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই গ্রামের অন্যতম আকর্ষণ প্রেমবাজার বা লাভ মার্কেট। এই বাজারে গিয়ে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন অনেকে। খুঁজে পেয়েছেন নিজেদের জীবনসঙ্গী।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, হমং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত এই প্রেমের হাট। তাদের রীতি অনুযায়ি বিশেষ কোনো শনিবারের রাতে সাপায় বসে এই প্রেমের হাট। এটি হ্যামং আদিবাসী সংস্কৃতির একটি অংশ। এখানে গিয়েই অনেক হমং আদিবাসী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এটি তাদের কাছে স্বর্গীয় এক স্থান।

বেহালাবাদক হমং আদিবাসী জিয়াং এ ভ্যাংয়ের বয়স এখন ৫০ বছর। ৩০ বছর আগে প্রথমবারের মতো তিনি প্রেমবাজারে যান। সেখান থেকে পছন্দ করা সেই নারীর সঙ্গে সুখেই কাটাচ্ছেন দাম্পত্য জীবন।

তিনি বলেন, 'আমি সেখানে গিয়েছিলাম সুন্দরী কোনো মেয়ের খোঁজে। প্রথমেই নজরে আসে একজন। তাকে দেখে আমি বেহালা বাজাতে থাকি। তাকে বলি, যদি আমার বাজনা ও আমাকে পছন্দ হয়, তাহলে সে আমার জীবনসঙ্গিনী হতে পারে। সেই থেকে শুরু।'

জিয়াং এ ভ্যাং তার আবেগ প্রকাশ করে বলেন, 'আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে তাকে পেয়েছিলাম। আমি মনে করি, সে-ও সৌভাগ্যবতী। কারণ, সে আমাকে পেয়েছে। আমরা খুব সুখেই আছি।'

গত কয়েক বছরে সাপায় পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। এএফপিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন লাখ ৬০ হাজার। ২০১৩ সালে তা বেড়ে ১২ লাখে দাঁড়ায়।

প্রেমবাজারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ভাং থি জো বলেন, 'এটি আমার কাছে খুবই বিশেষ। আমি একজন ভালো স্বামী খুঁজে পেয়েছি এখান থেকেই।'

তবে ভাংয়ের অভিযোগ, 'সাপার তরুণ সম্প্রদায় বা পর্যটকেরা প্রেমবাজারে যান সাময়িক আনন্দের জন্য। তারা সেখানে ছেলে বা মেয়ে বন্ধুর খোঁজে যান। কিন্তু হমং আদিবাসী প্রথা অনুসারে আমি চাই আমার ছেলেমেয়েরা সেখানে যাক স্বামী বা স্ত্রী খুঁজতে।'

লি থি মাই বলেন, 'আগে যখন কাউকে পছন্দ করে কোনো ছেলে বাঁশি বাজাত, তখন মেয়েটি ঘর থেকে বেরিয়ে আসত। কিন্তু এখন সবার হাতে হাতে মুঠোফোন। আগের মতো সেই চ্যালেঞ্জ আর নেই। আমি চাই আবার ২০ বছর আগের নিয়মে সব হোক।'

লি থি দোর মতে, প্রেমবাজার এখন একটি তামাশায় পরিণত হয়েছে। যখন তাদের বয়স কম ছিল, তখন এই ভালোবাসার বাজার ছিল কেবলই স্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য। কিন্তু এটি এখন একধরনের বাজারে পরিণত হয়েছে। সবাই এখানে টাকার জন্য আসে। মনিহারি দ্রব্যের মতো ভালবাসা বেচাকেনা চলে।'

কানাডার ক্যাপিলানো বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যটন পরিদর্শক ক্রিস কার্নোভ্যাল জানান, পর্যটনকেন্দ্রের কারণে সাপার আদিবাসীদের সংস্কৃতি বদলে যাচ্ছে।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ০৯, ২০১৪)