রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : করোনা ভাইরাস আক্রান্তের গুজবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের আবুল হোসেনের ছেলে এনজিও কর্মী আমিরুল ইসলাম। শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় ডাঃ হাবিবুল্লার কাছে তিন দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর স্থানীয়দের চাপে সোমবার দুপুর একটা ২৫ মিনিটে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রশাসন, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের অপপ্রচারের মুখে আমিরুল ও তার স্বজনরা মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতলার ২৬৬ নং ওয়ার্ডে (ফ্লু) যেয়ে কথা হয় কালীগঞ্জের লক্ষীনাথপুর গ্রামের আমিরুল ইসলামের(৪০) সঙ্গে। দীর্ঘ ১৩ বছর বেসরকারি সংস্থা সুশীলনের আশাশুনি শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। দু’ বছর আগে ডায়াবেটিকস ধরা পড়ে তার। ২৬ মার্চ সামান্য শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় তিনি কালীগঞ্জের ডাক্তার হাবিবুল্লাহ’ এর কাছে আসেন। তাকে ইসিজি, রক্ত ও প্রস্বাবসহসাতটি পরীক্ষার করার নামে খরচ করানো হয় সাড়ে চার হাজার টাকা। ২৯ মার্চ পর্যন্ত তার চিকিৎসায় খুশী হতে না পেরে তিনি বাড়ি এলেই তাকে বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে স্থানীয় জনগন ও জনপ্রতিনিধিরা।

একপর্যায়ে একটি এম্বুলেন্সে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সোমবার দুপুর একটা ২৫ মিনিটে ডাঃ মানস কুমার মণ্ডলের মাধ্যমে দোতলার ২২৬ নং ফ্লু ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করা হয়। তাকে একটি ডায়াবেটিকস মেশিনসহ দু’ হাজার টাকার ঔষধ কিনতে হয়। তবে সোমবার দুপুর দেড়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত কোন ডাক্তার বা নার্স তাকে দেখতে না আসলেও ডাঃ মানস মণ্ডলের দেওয়া ঔষধে তাৎক্ষণিক শ্বাসকষ্ট কমে যাওয়ায় পর তিনি বেশ সুস্থ আছেন। তার এখন ডায়াবেটিকস রয়েছে ১০দশমিক ৮।

আমিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সোমবার সন্ধ্যার পর তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ফেইসবুকে দেওয়া এমন খবরে তার বাড়িতে লোকজন, প্রশাসন, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিরা ভিড় জমায়। একপর্যায়ে তাদের বাড়ি লক ডাউন করার মত পরিস্থিতি হয়। তবে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ আরিফ আহম্মেদ ও ডাঃ মানস কুমার মণ্ডলসহ একদল চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেন। তার রক্তচাপ, তাপমাত্রা পরীক্ষা ও বুক পরীক্ষা করেন। এ সময় ডাক্তারগণ বলেন, তার শরীরে করোনার কোণ লক্ষণ নেই, তাকে ছুটি দিতের কোন আপত্তি নেই। তবে শরীরে নিউমোনিয়ার লক্ষন থাকতে পারে। এজন্য তাকে আরো দু’ এক দিন ছয় তলার একটি কেবিনে রেখে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে।

এ সময় আমিরুলের পাশে থাকা তার স্ত্রী রাশিদা বেগম, ভাই আহছান গাজী ও শ্বশুর মোঃ রবিউল মোড়ল মেডিকেল কলেজে যথাযথ সেবা না পাওয়া, ২১ ঘণ্টায় কোন সেবিকা বা ডাক্তারের দেখা না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এমন গুজবে আমিরুলের বাড়িতে যেভাবে লকডাউনের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে তারা বাড়িতে ফিরবেন কিভাবে তা ঠিক করতে পারছেন না । এ ব্যাপাওে তারা ডাঃ আরিফ আহম্মেদ ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তবে গত ২১ ঘণ্টায় কোন নার্স ফ্লু ওয়ার্ডে থাকেননি ডাঃ আরিফ আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাসিং সুপারভাইজার অর্পণা রানী পাল বলেন, পিপিই না থাকার ফলে অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তার কারণে এ ওয়ার্ডে কাজ করতে চায়নি। তবে এর জন্য ক্ষমা চান ওই নার্স কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আরিফ আহম্মেদ এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমিরুলের শরীরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোন লক্ষন দেখা মেলেনি। তবে তার শরীরে সাধারণ নিউমোনয়িার লক্ষণ থাকতে পারে। তাকে এখনই ছুটি দিতে কোন আপত্তি না থাকলেও তাকে ভালো রাখতে দু’এক দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছয় তলার কেবিনে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ ধরণের প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগে সংশ্লিষ্ঠ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সার্ংবাদিকদের কাছে আহবান জানান তিনি।

কালীগঞ্জের সহকারি কমিশনার (ভুমি) শিফাতউদ্দিন বলেন, আমিরুলের ব্যাপারে অহেতুক গণমাধ্যমে গুজব না ছড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/মার্চ ৩১, ২০২০)