প্রবীর সিকদার


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সীমাহীন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আপনার সমীপে একটি মানবিক সমস্যা তুলে ধরছি।

আমি বিশ্বাস করি, এই সমস্যাটি কেউ আপনার গোচরে আনেননি; এটি আপনার গোচরীভূত হলে এমন মানবিক সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হতেই পারতো না! এবার আমি সমস্যাটি তুলে ধরছি।

ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা চেন্নাই ব্যাঙ্গালোরসহ কয়েকটি শহরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁদের হাতে টাকাপয়সা নেই। হোটেল ভাড়া দিতে পারছেন না। এমনকি খাওয়া দাওয়া চালিয়ে যেতেও হিমশিম খাছেন। এই পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা আমাদের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা সহযোগিতার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন। 'ইন্ডিয়া ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি বাংলাদেশ' নামের একটি সংগঠন আটকে পড়া বাংলাদেশীদের পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ দূতাবাস তথা সরকারের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি জানার পর ওই সংগঠনটি বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দুই-একটি বিমান কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেছে। দূতাবাস কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, করোনা আতঙ্কের এই সময়ে কেউ বিমান চালাতে রাজি হচ্ছে না! কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে। আটকে পড়া বাংলাদেশীদের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ১৬০ সিটের বিমান চেন্নাই থেকে কোলকাতা রুটে দুটি ফ্লাইট ও ব্যাঙ্গালোর থেকে কোলকাতা রুটে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। বিমান কোম্পানি প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য ২০ লাখ রুপি ভাড়া দাবি করেছে।

অর্থাৎ চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালোরে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের কোলকাতা পর্যন্ত যেতেই ভারতীয় মুদ্রায় ৬০ লাখ রুপি ব্যয় করতে হবে। বাংলাদেশ দূতাবাস বলেছে, আটকে পড়া বাংলাদেশীরা বিমান ভাড়া বাবদ ৬০ লাখ রুপি বহনে সক্ষম হলে জানাতে, তারা বিমানের ব্যবস্থা করবেন। এখানে বলে রাখা জরুরি যে, আটকে পড়া বাংলাদেশিরা কোলকাতা পর্যন্ত যেতে পারবেন ৬০ লাখ রুপি ব্যয়ে। কোলকাতা থেকে তাদেরকে সড়কপথে বাংলাদেশে ফিরতে হবে নিজেদের উদ্যোগেই! তাহলে ঘটনাটা দাঁড়ালো এই যে, ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা ৬০ লাখ রুপি বিমান ভাড়া মিটিয়ে কোলকাতা পর্যন্ত যেতে পারবেন। কিন্তু তারা সেই একই বৃত্তে আটকে রইলেন, তাদেরকে কেউ উদ্ধার করলেন না! তারা তখন কোলকাতাতে আটকে পড়া বাংলাদেশী হয়েই থাকবেন; সেখানেও অনিশ্চিত জীবন!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি এই সমস্যা উপস্থাপনের শুরুতেই আপনাকে জানিয়েছি, চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের হাতে কোনও টাকা পয়সা নেই; চিকিৎসা ব্যয় ও জনতা কারফিউয়ে আটকা পড়ে তাদের সব শেষ। ওরা কী করে ভারতীয় মুদ্রায় ৬০ লাখ রুপি ব্যয় করে চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালোর থেকে কোলকাতা ফিরবে! এই দুশ্চিন্তায় সেখানে বাংলাদেশীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ভারতে জনতা কারফিউ ও আমাদের দেশে লকডাউনে বিপর্যস্ত জনজীবন! ওদের ভরসা এখন শুধুই আপনি। আপনিই পারেন, ওদেরকে সেখানে থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিতে এবং সুবিধামত সময়ে দেশে ফিরিয়ে এনে স্বস্তির জীবন ফিরিয়ে দিতে। আমি বিশ্বাস করি, ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ভোগান্তির বিষয়টি আপনি জানতে পারলেই, ওদের মুক্তির ব্যবস্থা পাকা হয়ে যাবে। স্বস্তির সেই দিনটির জন্য আপনাকে আগাম স্যালুট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

(পিএস/অ/মার্চ ৩১, ২০২০)