উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : ঢাকার দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার অপর তীরে জিঞ্জিরায় সমবেত নিরীহ আশ্রয়পার্থীদের ওপর পাকসেনাবাহিনী আক্রমন চালায়। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে পাকসেনাদের সশস্ত্র আক্রমণে ঝরে যায় শত শত প্রাণ, ছাই হয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। লুন্ঠিত হয় কেরানীগঞ্জ, ধর্ষিতা হয় কেরানীগঞ্জের অনেক মা-বোন। রক্তের বন্যা বয়ে যায় প্রতিটি গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই বর্বর ঘটনা “কেরানীগঞ্জ গণহত্যা” নামে পরিচিত হয়ে আছে।

টাঙ্গাইল হাইকমান্ড স্থানীয় জেলের সকল বন্দীদের ছেড়ে দেয়। পরে তাদেরই ৮০ জনের একটি দলকে হাইকমান্ড মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের জন্য নাটিয়াপাড়ায় অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে পাঠায়।

অবরুদ্ধ ঢাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ’র মেয়াদ শিথিল করা হয়।

বন্দী পাক অফিসার লে. আতাউল্লাহ শাহকে ঝিনাইদহ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের সদর দফতর চুয়াডাঙ্গাতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কমান্ডার মেজর এম এ ওসমান চৌধুরী তাঁর জবানবন্দী নেন।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম. টি হোসেন ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও আসেন এবং সুবেদার মেজর কাজিমউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মেজর এম. টি হোসেন যুদ্ধে যোগ দিলে সবাই সাদরে তাঁকে তাদের কমান্ডার হিসেবে বরণ করেন।

তিস্তা সেতুতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকবাহিনীর বেপরোয়া শেলিং শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা কোনো জবাব না দেয়াতে পাকসেনারা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের পুরোপরি আওতায় এলে মুক্তিযোদ্ধাদের অব্যর্থ গ্রেনেড ও গোলার আঘাতে বেশকিছু পাকসেনা নিহত হয়।

সন্ধ্যায় পাকবাহিনী পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে তিস্তা সেতুতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যাপক হামলা চালায়। এতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্যে ইপআর বাহিনীর সিপাই এরশাদ আলী ও সিপাই আতাহার আলী মল্লিক শহীদ হন।

চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং এবং স্টেট ব্যাংক এলাকাতে পাকসেনাদের সাথে ইপিআর বাহিনীর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে ইপিআর বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। যুদ্ধ সমগ্র শহরময় ছড়িয়ে পড়ে।

ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ শহরের সকল বাড়ি ও গাড়ির নম্বর এবং বানিজ্য প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড উর্দুতে লেখার আদেশ জারি করে।

অনুপস্থিত সকল কর্মচারীবৃন্দ অবিলম্বে কাজে যোগদান করলে তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না। কোনো নাগরিক ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) আশ্রয় দিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে-এই মর্মে ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা জারি করে।

ভারতীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভারতীয় জনগণের পূর্ণ সমর্থন ও সহানুভূতি প্রকাশ করে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গৃহীত হয়।

পাকিস্তান ভারতের কাছে তার দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্র্রতিবাদ জানায়।

হাইকোর্টের ৩৮ জন আইনজীবী এক যুক্ত বিবৃতিতে পাকিস্তানের ঘরোয়া বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপকে ‘নগ্ন ও নির্লজ্জ’ অভিহিত করে এর প্রতিবাদ জানায় এবং সম্ভাব্য সকল উপায়ে দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) বাধাদানের জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানায়।

সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নি সামরিক বাহিনীর চরম ব্যবস্থা গ্রহণ, ব্যাপক প্রাণহানি এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গ্রেফতার সোভিয়েত জনগণের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে একটি বার্তা পাঠান।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের সংহতি প্রশ্নে শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লগের মনোভাবের প্রতি তাঁর কোনো আস্থা ছিল না বলেই তিনি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের সংখাগরিষ্ঠ দলের ক্ষমতা ভাগাভাগির ওপর জোর দিয়েছেন।

সকালে ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড‘খ’ অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক লে. জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তথ্যসুত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর


(ওএস/এএস/এপ্রিল ০২, ২০২০)