গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : আধুনিক সভ্যতায় মানুষ যেখানে উন্নত জীবন-যাপন করছে, পাশাপাশি নৌকায় সেই মানুষেরই জন্ম, বিয়ে, সংসার ও মৃত্যুর ব্যতিক্রম চিত্রও রয়েছে। নদী কিংবা সাগরে নৌকায় ভেসে ভেসে মাছ শিকার করে চলে তাদের সংগ্রামী জীবন-সংসার। যে নদীর পানিতে জীবন সেখানেই আবার মরণ নিয়তি।

নিজস্ব কোনো ভূমি না থাকায় মৃত্যুর পর আবার এই মানুষেরই দেহ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ব্যতিক্রম জীবনযাপানে অভ্যস্ত এ মানুষগুলো মুসলমান হলেও মানতা সম্প্রদায় নামে পারিচিত। মাছ শিকার করে মানুষের আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র হলেও দেশের অর্থনীতিতে এদের ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামেও এদের কারো কারো ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সেই স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার স্বাদ কতটুকুই বা ভোগ করছে এরা।

শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ কোনো মৌলিক চাহিদাই জুটছে না এদের ভাগ্যে। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাদ্যের যোগান কিংবা বিশুদ্ধ পানির সুবিধা। সচেতনতা ও সুযোগের অভাবে এদের সন্তানগুলো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। সামান্য অক্ষরজ্ঞানও অর্জন করতে পারে না তারা। বড় হয়ে তাদের বেছে নিতে হয় মা-বাবার মাছ ধরার সেই পেশাকেই।

গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় রামনাবাদ, আগুণমুখা, বুড়া গৌরঙ্গ নদীতে নৌকায় বসবাসকারী ২০টি মানতা পরিবারের সরদার শহিদ জানান, বাড়ি ঘর না থাকায় নৌকায়ই তাদের ঘরবসতি। প্রাণঘাতী করেনাভাইরাসের কারণে হাটবাজার বন্ধ ও মানুষজন তেমন একটা বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় মাছ বিক্রি করতে ছাড়া তারাও নৌকা থেকে ডাঙায় ওঠেন না। তবে জীবিকার প্রয়োজনে নৌকায় বসেই রামনাবাদ, আগুণমুখা, বুড়া গৌরঙ্গ নদীতে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ শিকার করছেন। সবার শিকার করা মাছ একত্রিত করে তা নিয়ে দু-একজন সাঁঝবেলায় চরমোন্তাজ স্লুলিজ ঘাটে কিছু সময়ের জন্য নৌকা থেকে উঠে বিক্রি করে আবার নৌকায় ফিরে গিয়ে অবস্থান নেয়।

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর পানপট্টি, চরমন্তাজ, গলাচিপা, বদনাতলী, উলানিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদী ও মোহনাগুলোতে এ সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার লোক নৌকায় বসবাস করছে। বাড়ি ঘর না থাকায় প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এ পরিবারগুলোর হোম কোয়ারেন্টিন চলছে ভাসমান নৌকায়।

চরমোন্তাজ ইউনিয়নের ফাঁড়ি ইনচার্জ আনিচুর রহমান জানান, মানতা পরিবারগুলো হোম কোয়ারেন্টাইন চলছে ভাসমান নৌকায় এবং সরকারের তরফ থেকে সকল ত্রাণ পাচ্ছে তারা।

(এস/এসপি/এপ্রিল ০৫, ২০২০)