আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ঘরে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা চলে গেছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। 

হাতে গোনা দু’একজন নেতা ও জন প্রতিনিধি ব্যতীত কারো দেখা মিলছে না সাধারণ মানুষের পাশে। নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের খাদ্য সহায়তা বিতরণে সহায়তা ছাড়া তাদেরও দেখা মিলছে না আগের মতো। এই দুর্যোগের সময়ে প্রধানমন্ত্রী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নেতা কর্মীদের মানুষের পাশে দাড়ানোর নির্দেশনা দিলেও সরকারী দলের দ্বায়িত্বশীল নেতা ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাদের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে করোনা মোকাবেলায় অন্তত সচেতনতার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে অসহায় মানুষের সাহায্য-সহযোগীতা করার কথা আজ তাদের করো দেখা পাচ্ছে না সাধারন মানুষেরা।

দেখা মিলছে না দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ইসলামিক মনোভাবপন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর কোন নেতাদের। নির্বাচন কালীন সময়ে দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় বসন্তের কোকিলের মতো কেন্দ্রীয় বিএনপি অনেক নেতার আবির্ভাব ঘটলেও কোন দুর্যোগের সময়ে ওই সকল নেতাদের জনগনের পাশে দেখা যায় না। এলাকা বিচ্ছিন্ন নেতাদের উপর তাই নাখোশ দলের সাধারণ কর্মীরা। জাতীয় দুর্যোগময় মুহুর্তে সংবাদ কর্মীদের সক্রিয় থাকার কথা থাকলেও হাতে গোনা কয়েকজন সংবাদকর্মী ব্যতীত অন্যদের দেখা মিলছে না।

সারাদেশে সরকারী সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও লক ডাউনের আগে ও পরে একই ভাবে দলীয় অফিস, সরকারী কাজ ও এমপি আলহাজ্ব আবুল হসানাত আবদুল্লাহ’র খাদ্য সহায়তা পদানে প্রতিনিয়ত সাহায্য-সহযোগীতা করে আসছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরকারী কর্মকর্তাদের সকল কাজে সহায়তার পাশাপাশি মোবাইলে দলীয় নেতা কর্মীদের খোঁজ খবর নিয়ে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশনাও নেতা কর্মীদের প্রতিক্ষণে জানিয়ে দিয়ে খাদ্য সহায়তার তদারকি কাজও করে যাচ্ছেন তিনি।

সরকারী বরাদ্দকৃত চালের সাথে জাতির পিতার ভাগ্নে, মন্ত্রী পদমর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ -এমপি’র নিজস্ব তহবিল থেকে ডাল, আলু, সাবান, মাস্ক, নিয়ে সকালে ও বিকেলে দু’দফায় প্রত্যনস্ত এলাকার মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, তার সাথে মাঝে মধ্যে ছুটে চলেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দলীয় কার্যালয়ে প্রতিনিয়িত যাতায়াত করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাস, যুবলীগের সভাপতি সাইদুল সরদারসহ দু’এক জনকে। দলীয় অফিসে আসেন না উল্লেখযোগ্য কোন নেতা। কালে ভদ্রে উপজেলা সদরে দেখা মেলে উপজেলা ছাত্রলীগের হাতে গোনা দু’এক জন নেতাকে। যারা নিজেদের প্রয়োজনেই উপজেলা সদরে অবস্থান করেন।

প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কোন নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি করোনা মোকাবেলায় কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে। দেখা মিলছে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কোন নেতারও। ইসলামী মনোভাবাপন্ন অন্য দলের কোন নেতার দেখাও মিলছে না আগৈলঝাড়ায়। প্রত্যেক ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে গঠিত দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদেরও দেখা পাচ্ছে না সাধারণ জনগন। স্থানীয় হাট বাজারে আগের মতোই হাট বাজার বসলেও এর প্রতিকারে নেই দুর্যোগ প্রতিরোধ কমটির কোন ভুমিকা।

রাজনৈতিক দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জনগনের পাশে না দাড়ালেও কর্মহীন লোকজনের জন্য মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মলিনা রানী রায়, জেলা পুলিশ, থানা অফিসার ইন চার্জ মো. আফজাল হোসেন, ঘর মালিক রাসেল মিয়া, যুবলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী ফয়জুল সেরনিয়াবাত, ছাত্রলীগ নেতা সাগর সেরনিয়াবাত, শিল্পী মোল্লা, কাজী রিয়াজ, ব্যবসায়ি গাউস বক্তিয়ার, কালাম হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন দিলীপ, অনলাইন ২০২০ পন্য সরবরাহ প্রতিস্টান, অলস্টার ক্লাব, সূর্য তরুণ ক্লাব, মানবতার ঘরসহ বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান দুর্যোগের সময়ে আর্তমানবতার জন্য খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে পাশে দাড়িয়েছেন। তবে সমাজসেবায় অবদানের নামে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেষ্ট ও সম্মাননা প্রাপ্ত হয়েছেন তাদের কাউকেই আর্ত মানবতার পাশে দাড়াতে দেখা যায়নি।

এ ব্যাপারে প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক কেএম আজাদ রহমান বলেন, আগৈলঝাড়ায় শিল্পপতির ও বড় ব্যবসায়ির সংখ্যা অনেক। অনেকেই সমাজসেবক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে নিজেদের জাহির করলেও তাদেরও কাউকে কর্মহীন দুঃস্থদের সহায়তা প্রদান তো দুরের কথা এখন রাস্তায়ও দেখা যায় না। দুর্যোগ মুহুর্তে তারা কর্মহীন মানুষের না দাড়ানোয় হতাশ হয়েছে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।

(টিবি/এসপি/এপ্রিল ০৬, ২০২০)