পাবনা প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কর্মহীন শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা তহবিল গঠনের নামে ২৬ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে পাবনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে।

নির্বাহী প্রকৌশলী নিজের অনুসারী একটি প্রভাবশালী ঠিকাদারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাধারণ ঠিকাদারদের জোরপূর্বক এ তহবিলে অর্থ প্রদানে বাধ্য করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগী একাধিক ঠিকাদারের। তবে তহবিল গঠনে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে ঠিকাদাররা নিজ উদ্যোগেই কাজটি করছেন এবং অসতৎ জামাতপন্থী ঠিকাদার ঈর্ষান্বিত হয়ে এই মিথ্যা রটাচ্ছেন বলে নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম বাদশা মিয়ার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী ঠিকাদার অভিযোগ করেন, গত রোববার নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম বাদশা মিয়া নিজ কার্যালয়ে ফোন করে তাদের ডেকে নেন। এ সময় তিনি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা তহবিল গঠনের কথা জানিয়ে অনুদান দিতে বলেন। নির্দিষ্ট কোন অঙ্ক বেঁধে না দিলেও সামর্থ্য অনুযায়ী দ্রুত অর্থ জবা দিতে তাগিদ দেন তিনি। ওই তহবিলে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৬ লাখ টাকা চাঁদা জমা হয়েছে বলে দাবি ঠিকাদারদের। সামান্য কিছু ত্রাণ দিতে এতে টাকার কী প্রয়োজন তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী নাইস কন্সট্রাকশনের মালিক হাজী ফারুকের মাধ্যমে তার অনুসারী একটি দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার সিন্ডিকেটকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে এ অর্থ আদায় করেছেন। কেবল করোনা পরিস্থিতিই নয়, নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারকে খুশি করাতে এলজিইডি অফিসে থার্টি ফাস্ট উদযাপন, আস্ত খাসির বারবি কিউ পার্টি, বিজয় দিবসে ভোজ সহ নানা অজুহাতে মাঝে মাঝেই জোর পূর্বক চাঁদা আদায় করেন তারা।

ঠিকাদাররা আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখে আমরা নিজেদের সাইটে কর্মরত শ্রমিকদেও নিয়মিত সাহায্য করছি। আলাদা করে এলজিইডি থেকে ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন ছিলো না। করোনা দুর্যোগে আমরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, এরপরও পরিস্থিতির কারণে নির্বাহী প্রকৌশলীর খায়েশ পূরণ করতে বাধ্য হয়েছি।

ত্রাণ তহবিলে অর্থ প্রদানের কথা স্বীকার করে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদার রুহুল আমিন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম বাদশা মিয়া প্রায় ১৫০০ জন শ্রমিককে খাদ্য সহায়তার জন্য তহবিল গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রকৌশলী স্যারের অনুরোধে আমি এই তহবিলে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছি। নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সম্মানে অন্যান্য ঠিকাদাররাও এ তহবিলে অর্থ প্রদান করেছেন।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর ত্রাণ তহবিল গঠন সম্পূর্ণ অনৈতিক ও আইন বহির্ভূত।তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যেকোনো ত্রাণ কার্যক্রম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জানিয়ে এবং সমন্বয় করে পরিচালনা করতে হবে। যে কোনো অনুদান কিংবা ত্রাণ জেলা প্রশাসকের তহবিলে জমা দিতে হবে, কোথায় বিতরণ হচ্ছে তা জানাতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কিংবা ঠিকাদারদের কেউই তাদের তহবিলের বিষয়ে আমাকে জানাননি। এটি নির্বাহী প্রকৌশলীর এখতিয়ার বহির্ভূত।

ত্রাণ কার্যক্রমে তহবিল গঠনে নিজের সর্ম্পক্ততা অস্বীকার করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। যদি ঘটেও থাকে তাহলে ঠিকাদাররা নিজেরাই করেছেন।

তিনি বলেন, এলজিইডির ঠিকাদার জামায়াতে ইসলামীর নেতা জিন্নাত আলী জিন্নাহ পাবনার ঈশ্বরদী, ফরিদপুর, আতাইকুলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে নিম্নমানের ইটের খোয়া রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছিলেন। যা আমি বন্ধ করে দিয়েছি। শতাধিক ট্রাক নিম্নমানের খোয়া জব্দও করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন নির্মাণ কাজে অনিময় ও দূর্নীতি করায় আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছি।

নির্বাহী প্রকৌশলী বাদশা মিয়া বলেন, সততার সাথে দায়িত্ব পালন করছি বলেই ঠিকাদার আমার উপর ক্ষুদ্ধ হয়েই এ ধরণের মিথ্যা রটাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকা এবং ঘরবন্দি অসহায় দিনদরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন এবং সমাজের বিত্তশালীরাও এগিয়ে এসেছেন। যদি ঠিকাদাররা নিজ উদ্যোগে তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা দেন সেক্ষেত্রে আমার করার বা বলার কিছু নেই।

(পিএস/এসপি/এপ্রিল ০৬, ২০২০)