স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ) আকার বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে ঋণের সুদহারও কমানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে এ তহবিল থেকে মাত্র দুই শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন রফতানিকারকরা।

মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়ানো এবং রফতানিকারকদের সহযোগিতা করতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজের তাওতায় এ সুবিধা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, ২০১৭ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) এর ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদের হার ছিল লাইবর + ১ শতাংশ। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাইবর (লন্ডনের আন্তঃব্যাংক অফার রেট) + ২ দশমিক ৫০ শতাংশ মুনাফা রাখত ব্যাংকগুলো। তবে ২০১৯ সালে এই সুদহার পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায় থেকে ইডিএফের সুদের হার নির্ধারণ করা হয় লাইবর + ১ দশমিক ৫ শতাংশ।

করোনাভাইরাসের কারণে ফান্ডের আকার ও সুদহারে পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইডিএফের আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি কমানো হয়েছে সুদের হার। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ইডিএফের ঋণের বিপরীতে লাইবর + ১ শতাংশ সুদ রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি আমদানি-রফতানির সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকের এডি শাখাগুলো গ্রাহক পর্যায় থেকে ২ শতাংশ মুনাফা করতে পারবে।

এর আগে গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৫টি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। যা জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এর মধ্যে অন্যতম ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো। প্যাকেজ-৩ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। এর ফলে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার লাইবর + ১ দশমিক ৫ শতাংশ (যা প্রকৃতপক্ষে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ) থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্যাকেজগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্যাকেজ-১ : ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা, প্যাকেজ-২ : ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান, প্যাকেজ-৩ : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো এবং প্যাকেজ-৪ : ‌প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম' নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন তহবিল চালু করবে, যেখান থেকে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে।

এর আগে গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০৭, ২০২০)