স্টাফ রিপোর্টার : আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাদের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে থাকলেও বিএনপির নারী নেত্রীরা পিছিয়ে রয়েছেন নীতি নির্ধারণে। দলের নীতি নির্ধারণে তাদের তেমন গুরুত্ব নেই। এমনকি তারা দলের পদ সংকটে রয়েছেন। একমাত্র জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ব্যতীত দলের প্রত্যেকটি কমিটিতে নির্দিষ্ট কিছু পদ ছাড়া কোথাও জায়গা নেই তাদের। ফলে দলের নারী নেত্রীদের মাঝে পদ পাওয়া এবং তা দখলের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। যার কারণে অনেক সময়ে নিজেদের মাঝে কোন্দলের রাজনীতিরও উত্থান ঘটে।

দলের একাধিক নারী নেত্রী জানান, দলের নারীবিষয়ক পদ ছাড়া অন্য পদ পাওয়া যেন আকাশকুসুম ব্যাপার অথচ দলে পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে নারী নেত্রীরাও অবদান রাখছেন। এছাড়া দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও একজন নারী। কিন্তু দলের অঙ্গ সংগঠন মহিলা দল ব্যতীত কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আমাদের অথচ দলের প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের সময়ে যুব মহিলা দল গঠন করা হয়েছিল। যার নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা জাহানার বেগম। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই সংগঠন আজ হারিয়ে গেছে।

ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিমা আক্তার কেয়া জানান, দলে নারী নেত্রীদের জন্য পদ-পদবি জায়গা সংকটের কারণে অনেক ভালো নেতৃত্ব হারিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নতুনরা আসতেও উৎসাহিত হন না। আবার অনেক সময়ে দলের পদ-পদবি ধরে রাখার জন্য গ্রুপিংয়ের রাজনীতি চালু হয়ে থাকে অথচ আমাদের রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ আওয়ামী লীগে মহিলা লীগের পাশাপাশি যুব মহিলা লীগ সংগঠন রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতৃত্বকে সরাসরি যুব মহিলা লীগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যার কারণে বিএনপির মতো তাদের নেতৃত্বে আসার প্রবল প্রতিযোগিতার নামে নোংরামি কিংবা সেশনজটে পড়তে হয় না।

জানা গেছে, বিএনপির গঠণতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাহী কমিটিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা থাকলেও আশান্বিত হতে পারছেন না তারা। কারণ হিসেবে দলের নারী নেত্রীরা জানান, দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের আগে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে নারী নেত্রীরা ভালো অবস্থানে ছিলেন। দলের নেতারা বিভিন্ন মামলার কারণে নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সুযোগে অনেক ক্ষেত্রে নারীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ফলে তাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও স্থান পেতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু আগামীতে সেরকম পরিস্থিতির সুযোগ না থাকায় দলে নারীদের নিয়ে ভিশন ব্যর্থ হতে পারে।

হেভিওয়েট নেতাদের দাপটের ভিড়ে এবারো নারীরা তেমন শক্ত অবস্থানে যেতে পারবেন না বলেও তাদের আশঙ্কা। এছাড়া নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলের কোনো কমিটিতে নারীদের ব্যাপকহারে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আশানুরূপ ফল আসেনি।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা অঙ্গ সংগঠনে নারীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ইতোমধ্যে মহিলা দলের অনেক নেত্রী যুব মহিলা দল গঠন করার প্রচেষ্টা করছেন বলেও জানা গেছে। কিন্তু দলের হাইকমান্ড এখনো ইতিবাচক সাড়া না দেয়ায় এ উদ্যোগ এখনো অঙ্কুরেই রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় এক নেত্রী জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে নারী নেত্রীদের যথাযাথ স্থানে জায়গা দিতে পারেন না। আবার মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও অনেক ত্যাগী নারী রাজনীতিককে স্থান দেয়া সম্ভব হয় না। এ নিয়ে সংগঠনের অভ্যন্তরে কোন্দল আর গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়। এসব কারণে নারীদের জন্য নেতৃত্ব সৃষ্টি করতেই আমরা যুব মহিলা দল তৈরি করতে চাচ্ছি।

সাবেক এমপি রাশেদা বিগম হীরা বলেন, বিএনপিকে সংগঠিত করতে দলের মহিলা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেকটা নিরসন হবে। এছাড়া সারাদেশে এ সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারলে দলের সাংগঠনিক ভিত্তিও অনেক শক্ত হবে। তিনি জানান, একসময়ে বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন হিসেবে যুব মহিলা দল অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ওই সময়ে নারীরা রাজনীতিতে তেমন সম্পৃক্ত না থাকার কারণে সংগঠনটির গুরুত্ব কমে যায়। যার কারণেই হয়তো একসময়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় যুব মহিলা দল। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। এখন অনেক মেধাবী ছাত্রী রাজনীতিতে আসছে। কিন্তু তাদের সংগঠিত করতে না পারার কারণে মেধাবী নেতা হারিয়ে ফেলছি আমরা।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ১০, ২০১৪)