নিউজ ডেস্ক : পুরনো এবং নতুন সব বাজারে পোশাক রফতানি বাড়ছে। বিশেষ করে নতুন বাজারে রফতানি প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। সমাপ্ত অর্থবছরে নতুন বাজার থেকে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এসব বাজারে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ।

বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে বিশ্বমন্দায় প্রধান প্রধান বাজারে রফতানি কমে যাবার আশঙ্কায় ছোট ছোট নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকেও প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি নতুন বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে নতুন বাজার থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসুর মতে, নতুন বাজার সম্প্রসারণে ইপিবির ভূমিকাই মুখ্য। বাজার সম্প্রসারণে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) আলোচনার মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে।

ইপিবি এবং বিজিএমইএর গবেষণা সেলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন অর্থবছর ধরে প্রতি বছর নতুন বাজারে রফতানি আয় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নতুন বাজারের সম্মিলিত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

তৈরি পোশাকের নতুন বাজার : নতুন বাজার হিসেবে তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া. মেক্সিকো, রাশিয়া, আফ্রিকা, ব্রাজিল, মধ্যপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে, পর্তুগাল, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্তত ২৫টি দেশকে নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করেন রফতানিকারকরা।

আলোচ্য সময়ে এসব বাজারের মধ্যে শীর্ষে ছিল তুরস্ক। রফতানি হয়েছে ৬২ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পণ্য। এসব বাজারের মধ্যে গত অর্থবছর শীর্ষে থাকা জাপান এবার দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। তবে গত বছরের ৪৯ কোটি ডলার থেকে আয় বেড়ে হয়েছে ৫৭ কোটি ২২ লাখ ডলার। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আগের বছরের আয় থেকে সামান্য বেড়ে রফতানি হয়েছে ৪৩ কোটি ডলারের পণ্য। নতুন বাজারের মধ্যে ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া সব বাজারেই আগের বছরের তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে।

অন্যদিকে প্রচলিত বাজার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় জার্মানি, এবং তৃতীয় ফ্রান্স। তবে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এখন কম বেশি বাংলাদেশি পোশাক রফতানি হচ্ছে।

বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, রফতানি বাজার হিসেবে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে চান তারা। এ কারণে নতুন নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন তারা।

এসব বাজারে আবহাওয়া এবং স্থানীয় ফ্যাশন নিয়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চাহিদা অনুযায়ী পোশাক উৎপাদনে জোর দিচ্ছেন তারা। যেমন রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকোসহ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে রফতানি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আগামীতে নতুন বাজারের রফতানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বলেছেন, বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন দেশে দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, আলজেরিয়ার মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে।

নতুন বাজার সম্প্রসারণে যৌথ উদ্যোগ : পোশাকশিল্পের নতুন বাজার খুঁজতে প্রতি বছর বিজিএমইএ ও বিকেএমই বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে থাকে। সফরে সরকারি, বেসকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা। এভাবেই বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। সহায়তা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাবনাময় বিভিন্ন দেশে দূতাবাস খোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ব্রাজিলে হাইকমিশন খোলা হয়েছে। এই হাইকমিশনের মাধ্যমে ব্রাজিল ছাড়াও লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে ক্রেতা সন্ধান করা হচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের একক মেলার আয়োজন এবং আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ। সূত্র: সমকাল।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ১০, ২০১৪)