নিউজ ডেস্ক : ফারসি 'শব' শব্দের অর্থ রাত এবং 'বরাত' শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে 'লাইলাতুল বরাত', অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনি। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ পালন করে সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে। আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতটিই পবিত্র শবেবরাত।

এই মর্যাদাপূর্ণ রাতে মহান আলস্নাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এ রাতে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকবেন। দিনে রোজা রাখবেন অনেকে। দান-খয়রাত করবেন। বিগত জীবনের পাপ মার্জনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করবেন।

আরবি দিনপঞ্জিকা অনুসারে শাবান মাসের পর আসে পবিত্র রমজান মাস। শবে বরাত মুসলিমদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। তাই শবেবরাতের রাত থেকে আসন্ন রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায়।

পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে তারা মুসলিম উম্মার বৃহত্তর ঐক্য, দেশ-জাতির কল্যাণ ও বিশ্বশান্তি কামনা করেছেন।

যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র শবেবরাত পালনের জন্য প্রতি বছর বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শবেবরাতের ফজিলত, ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব, শবেবরাত ও রমজানের তাৎপর্য বিষয়ে আলোচনা কর্মসূচির আয়োজন করলেও মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে এবার এ ধরনের আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। মুসলিস্নদের মসজিদে না এসে ঘরেই শবেবরাতের নফল ইবাদত আদায় করার জন্য বলা হয়েছে।

শবেবরাত একটি মহিমান্বিত রজনি। এ রাতে আলস্নাহতায়ালা তার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন, পাপী-তাপী বান্দাদের উদারচিত্তে ক্ষমা করেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন- এ জন্য এ রাতকে শবেবরাত বলা হয়। হাদিস শরিফে এ রাতটিকে 'নিসফে শাবান' বলা হয়েছে। অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রজনি তথা ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। মুসলিম উম্মাহর কাছে এ রাতটি খুবই গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ।

বিভিন্ন হাদিসে শবেবরাতের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়শা (রা.) বর্ণনা করেন- কোনো এক শাবানের অর্ধরাতে রাসূল (সা.)-কে বিছানায় পাওয়া যাচ্ছিল না। খুঁজে দেখা গেল তিনি জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করছেন। (সহি মুসলিম)।

আরেক হাদিসে হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধশাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত করো এবং পরের দিনটিতে রোজা রাখো। কেননা এ রাতে আলস্নাহ তায়ালা সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব। আর সুবহে সাদিক পর্যন্ত এ ডাক অব্যাহত থাকে। (ইবনে মাজাহ)।

হযরত ইকরিমা (রা.)-সহ প্রমুখ তাফসিরবিদের মতে, আল কোরআনে সূরায়ে দোখানের প্রথম আয়াতগুলোতে শবেবরাতের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় এ রাতকে 'লাইলাতুসসফ' নামে অভিহিত করা হয়েছে এবং এর বরকতময় হওয়া ও রহমত নাজিল হওয়ার কথা উলেস্নখ করা হয়েছে।

শবেবরাত বিশেষ ফজিলতময় হওয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা একনিষ্ঠভাবে আলস্নাহর ইবাদতে মশগুল হন। নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ পাঠ, জিকির-আজকার, তওবা-ইস্তেগফার করে নিজেদের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে আলস্নাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মৃত আত্মীয়স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।

অধিক নফল নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, তাসবিহ পড়া, দোয়া করা; এসব ইবাদত এই রাতে করা যায়। কোনো কোনো হাদিসের আলোকে শাবান মাসের ১৫ তারিখ অর্থাৎ, বরাত রজনির পরের দিন নফল রোজা রাখা অনেক সওয়াবের কাজ।

এই রাতে আরেকটি বিশেষ আমল রয়েছে, যা একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতের বিশেষ কোনো ইবাদত ও ইবাদতের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। নেই নামাজের কোনো নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা, নেই ভিন্ন কোনো পদ্ধতি। এই রাতে যেসব ইবাদত করা হবে সবই নফল ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। আর নফল ইবাদত নীরবে আপন আপন ঘরে একাগ্রচিত্তে করা উত্তম।

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, এসব ইবাদতের জন্য মসজিদে যাওয়া জরুরি নয়। এছাড়া এবারের পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় কবরস্থান ও মসজিদে না যাওয়াটাই বেশি সওয়াবের কাজ হবে। যেখানে ফরজ নামাজের জন্যই মসজিদে গমন না করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে, সেখানে নফল ইবাদতের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাই মৃত আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম মরহুম-মরহুমাদের জন্য ঘরে বসেই দোয়া করা উত্তম হবে তারা অভিমত দেন।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০৯, ২০২০)