আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতজুড়ে জারি রয়েছে লকডাউন। ফলে জরুরি পণ্য পরিবহন ছাড়া বন্ধ সব ধরনের গণপরিবহন। এই লকডাউনের কারণে বহু মানুষ নিজের ঘরবাড়ি থেকে আটকে পড়েছেন দূরের কোনো শহরে বা গ্রামে।

আটকে পড়া এমনই একজন ছিলেন নিজামুদ্দিন। তেলেঙ্গানার এই তরুণ অন্ধ্র প্রদেশে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আটকা পড়েন। ক’দিন সেখানে থাকলেও আর মন টিকছিল না। ওদিকে গাড়ি-ঘোড়াও বন্ধ। বাড়ি ফিরতে ছেলের আকুতি আর সইলেন না মা রাজিয়া বেগম।

স্থানীয় পুলিশের অনুমতিসাপেক্ষে নিজের স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অন্ধ্র প্রদেশের নেল্লোরের উদ্দেশে। ১৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত ছেলের কাছে পৌঁছান। পরে সেই স্কুটির পেছনেই ছেলেকে বসিয়ে বাড়ি ফেরেন রাজিয়া।

গত সোমবার (৬ এপ্রিল) থেকে বুধবার (৮ এপ্রিল) পর্যন্ত তিন দিনের এ যুদ্ধজয়ের খবর ছড়িয়ে গেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। করোনাভাইরাসের মতো মহাদুর্যোগে এভাবে ছেলেকে বুকে ফিরিয়ে আনা কেবল মায়ের পক্ষেই সম্ভব বলে উল্লেখ করছে সংবাদমাধ্যম।

৪৮ বছর বয়সী রাজিয়া বেগম বলেন, ‘একটি ছোট দু-চাকার গাড়িতে একা একজন নারীর পক্ষে এই সফর করা মোটেই সহজ ছিল না। তবে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেই হবে, আমার এই অদম্য ইচ্ছার সামনে সব ভয় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। আমি সঙ্গে শুধু ক’টি রুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। রাতে যানজট নেই, রাস্তায় কোনো লোক নেই, যদিও রাস্তাঘাট এত ফাঁকা থাকায় ভয় ভয় করছিল, তবে আমি আমার সিদ্ধান্তে স্থির ছিলাম।’

সংবাদমাধ্যম জানায়, রাজিয়া হায়দরাবাদ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে নিজামবাদে একটি সরকারি স্কুলে চাকরি করেন। ১৫ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। তারপর থেকে দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে একা হাতেই জীবনযুদ্ধে লড়ে চলেছেন তিনি।

তার বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং ছোট ছেলে নিজামুদ্দিন কিছুদিন আগেই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এমবিবিএসের প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য বিশেষ কোচিং করছেন নিজামুদ্দিন।

নিজামুদ্দিনের আটকে পড়ার বিষয়ে জানা যায়, তিনি গত ১২ মার্চ নেল্লোরের রহমতবাদে এক বন্ধুর বাড়িতে যান। সেখানে বেড়ানোর মধ্যে করোনার কারণে গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ফলে বন্ধুর বাড়িতেই আটকে পড়েন। তিনি চাইছিলেন বাড়ি ফিরতে, কিন্তু কোনো যানবাহন না থাকায় ফেরার কোনো উপায় পাচ্ছিলেন না।

মায়ের কাছে ফিরতে ছেলের এই ব্যাকুলতা দেখে রাজিয়া বেগম নিজেই নেল্লোরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশের অনুমতিসাপেক্ষে ৬ এপ্রিল সকালে তিনি তেলেঙ্গানার বাড়ি থেকে স্কুটি নিয়ে বের হয়ে গোটাদিন চালিয়ে পরদিন বিকেলে নেল্লোর পৌঁছান। তারপর সেখান থেকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ফের বাড়ির দিকে রওনা হন। ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাড়ি পৌঁছান রাজিয়া ও তার ছেলে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০২০)