মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : প্রবাসী অধ্যুষিত ও চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজারের ৯২ টি চা বাগানে প্রাণঘাতী করোনা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে কম মজুরী প্রাপ্ত অবহেলিত চা শ্রমিকদের। এনিয়ে এসব চাবাগানের শ্রমিকদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ আর আতঙ্ক। এমন আতঙ্ক আর ঝুঁকি নিয়ে কোন সুরক্ষা ছাড়াই প্রতিদিন কাজে যোগ দিতে হচ্ছে হাজার হাজার চা শ্রমিককে।  

দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ছুটি আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হলেও ছুটি নেই জেলার ৯২টি চা বাগানের যুক্ত চা শ্রমিকদের। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। এমন প্রেক্ষাপটে জেলার চা শ্রমিকরা স্ব স্ব চাবাগানে মজুরীসহ ছুটির দাবিতে একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করছেন।

শনিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে জেলার অন্যান্য চা বাগানের মত মৌলভীবাজার সদর উপজেলা মৌলভী চা বাগানের চা শ্রমিকরাও বানবন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। এতে দেখা যায় শ্রমিকরা স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কর্মসূচী পালন করছেন। মৌলভী চাবাগানের পাশেই রয়েছে এনটিসি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রেমনগর চাবাগান। সেখানেও ছুটির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের খবর পাওয়া গেছে। তবে প্রেমনগর চাবাগানের ব্যবস্থাপক দেওয়ান বাহাউদ্দীন লিটন বলেন, তিনি এখনো মানববন্ধনের কোন খবর পাননি।

জেলার সবগুলো চাবাগানের মত মানববন্ধন হয়েছে, শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও চাবাগান, কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর চাবাগান, আলিনগর চাবাগান, শ্রীমঙ্গলের জাগছড়া চাবাগান, খাইছড়া চাবাগান,ভুরভুরিয়া চাবাগান, ইস্পাহানী চাবাগান, ফিনলে চাবাগান, কালিঘাট চাবাগান, মাকড়িছড়া চাবাগান, ফুলবাড়ি চাবাগান, দেওরাছড়া চা বাগান গুলোতে। দেখা যায় মানবন্ধনে অংশ নেয়া শ্রমিকরা সাদা রঙ দিয়ে আঁকা গোল বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কর্মসূচী পালন করছেন।

এদিকে মৌলভী চাবাগানে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, করোনার প্রভাবে আমরা চা শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে এক জায়গায় বসে কাজ করছি,এক জায়গায় বসে খাবারও গ্রহণ করছি, আমাদের কোন ছুটি নেই। আমাদের জন্য বাগানে কোন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই, আমরা নালা এবং খাল থেকে পানি উত্তলন করে তা পান করছি, এতে করে আমাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। এঅবস্থায় আমরা প্রত্যেক চাবাগানে নায্য মজুরীসহ ছুটি দাবি করছি। এসময় বক্তারা আরো বলেন, সকল প্রতিষ্ঠান ও ডিপার্টমেন্ট এর শ্রমিকদের পূর্ণ মজুরী থাকার পরেও সরকার ও মালিক পক্ষ তাদের ছুটি প্রদান করছে। কিন্ত চা শ্রমিকরা কম মজুরী পেয়েও সরকার ঘোষিত ছুটি থেকে বঞ্চিত।

এবিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাঁরা যদি সামজিক দুরত্ব বজায় রেখে কাজ করে তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই আর চা শ্রমিকদের ছুটির বিষটি বিবেচনাধীন আছে আমরা তাদের ছুটির বিষয়টি দেখবো। তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছাতে কাজ চলছে ,এনিয়ে চাবাগান মালিকদের সাথে কথাও হয়েছে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরি বলেন, চা শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করছে। মৌলভীবাজার জেলার চাবাগানগুলোতে কর্মরত চা শ্রমিক পরিবারের অনেকে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে কাজ করেন, যাদের অনেকেই ইতিমধ্যে ফিরে এসে পরিবারের সাথে বসবাস করছেন, বিষয়টি আমাদের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। যার কারনে মরণঘাতী করোনা সংক্রমণ যেকোন সময় চাবাগান গুলোতে ছড়িয়ে পরতে পারে।

তিনি বলেন, এমনিতেই চাবাগানের মালিক পক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন স্বাস্থ্য বিধির ব্যবস্থা রাখেনি তাই সংক্রমণ রোধে দেশের সব শিল্প-কারখানায় যুক্ত শ্রমিকরা ছুটি পেলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষ চা শ্রমিকদের ছুটি না দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এঅবস্থায় আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি মজুরীসহ চা শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে তাদের জীবনকে শঙ্কামুক্ত রাখতে।

(একে/এসপি/এপ্রিল ১১, ২০২০)