স্টাফ রিপোর্টার : রোজা সামনে রেখে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে আদার। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দাম বেড়ে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেও এই পণ্যটির দাম বেড়েছিল।

ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে আদার কেজি ছিল ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর তা একলাফে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা হয়। এই দাম প্রায় মাসখানেক স্থির থাকলেও এখন একলাফে ৩০০ টাকা হয়েছে।

হঠাৎ আদার এমন দাম বাড়ার বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রোজা কাছে চলে আসা আদার দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। তাছাড়া এখন আমদানি করা আদার সরবরাহ কম। আবার করোনা আতঙ্কে যারা আগেই আদা কিনে রেখেছিলেন তাদের আদা ফুরিয়ে আসছে। ফলে আদার চাহিদা বেড়েছে। এসব কারণেই আদার দাম বেড়ে গেছে।

আর ক্রেতারা বলছেন, এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী মানুষকে জিম্মি করে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। তাদের অভিযোগ, বাজারে কার্যকরী মনিটরিং না থাকায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা তার সুযোগ নিচ্ছে এবং বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।

তারা বলছেন, করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একলাফে আদার দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়। আর রোজার সামনে তা আরও বেড়ে তিনশ টাকা হয়েছে। এটা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। পরিকল্পিতভাবে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। যারা মানুষের খারাপ সময়ের সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম বাড়ায় তাদের কিছুতেই ছাড় দেয়া উচিত না। সরকারের উচিত দ্রুত এই চক্রকে চিহ্নত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।

মঙ্গলবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা আমদানি করা আদা বিক্রি করছেন ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। আর দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।

এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। আর দেশি আদার দাম বেড়েছে ১০৯ শতাংশ।

প্রতিষ্ঠানটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং এক মাস আগে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর আমদানি করা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং এক মাস আগে ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

আদার দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, আদার দাম যে হারে বাড়ছে আমরাও অবাক হয়েছি। আমাদের ধারণা রোজার কারণে আদার এই দাম বেড়েছে। কারণ রোজার সময় যেসব খাবার বেশি বিক্রি হয়, তার সবকিছুতে আদা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আমদানি করা আদার সরবরাহও কম। এসব কারণে দাম বেড়েছে।

রামপুরার ব্যবসায়ী মিলন বলেন, করোনাভাইরাসের শুরুতে আদার দাম বেড়ে ছিল। এরপর প্রায় এক মাস দাম স্থির ছিল। কিন্তু এখন একলাফে দাম বেড় দ্বিগুণ হয়েছে। এর অন্যতম কারণ রোজা কাছে চলে আসা। তাছাড়া করোনার শুরুতে যারা আদা কিনেছিলেন তাদের অনেকের আদা শেষ হয়ে গেছে। রোজা সামনে রেখে তারা আবার বেশি পরিমাণে আদা কিনছেন। ফলে আদার চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণেই আদার দাম বেড়ে গেছে।

আদার এমন দামের বিষয় খিলগাঁও থেকে বাজার করা আরিফুল ইসলাম বলেন, বাজারে কোনো মনিটরিং নেই। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো সবকিছু করছেন। করোনার শুরুতে কিছুদিন ভোক্তা ও র্যাবের অভিযান হলো। এতে কিছু পণ্যের দাম কমে। কিন্তু এখন অভিযান নেই। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা একের পর এক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ কোনো কিছুতেই ক্রেতাদের স্বস্তি নেই।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সবাই এখন আতঙ্কে রয়েছেন। কবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা কেউ জানে না। আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। অনেকে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ এমন পরিস্থিতিতেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী একের পর এক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। এদের মানুষ বলে ভাবতেও কষ্ট হয়। সরকারের উচিত দ্রুত এই মুনাফালোভীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৪, ২০২০)